তেনালি রামা একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমান বেক্তি ছিলেন। তার বুদ্ধি দিয়ে বহুবার বিজয়নগরের রাজাকে ও প্রজাদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে বাঁচিয়েছেন। “অপয়া রাময়া” তেনালি রামার তেমনই একটি গল্প।
বিজয়নগর রাজ্যে এক লোক বাস করতেন, যার নাম ছিল রাময়া।
তাকে সবাই অশুভ বা অপয়া মনে করত। তারা মনে করত, সকালে উঠে প্রথমেই রাময়ার মুখ দেখলে সারাটা দিন অশুভ যাবে।
কথাটি রাজামশাইয়ের কানেও পৌঁছেছিল। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য রাজামশাই রাময়াকে তার প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানালেন। তিনি পরিচারকদের বলে দিলেন, রাময়ার জন্য থাকার ব্যবস্থা যেন মহারাজের ঘরের ঠিক পাশেই হয়।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাজামশাই কারও মুখ না দেখে সরাসরি রাময়ার ঘরে ঢুকলেন এবং তার মুখ দেখলেন।
সেদিন দুপুরে রাজামশাই খেতে বসলেন। হঠাৎ তার থালায় একটি মাছি বসল। মাছি বসায় রাজামশাই কিছুই খেতে পারলেন না।
রাঁধুনিকে ডেকে আবার তার জন্য মধ্যাহ্নভোজ প্রস্তুত করার আদেশ দিলেন। রান্না হলো কিন্তু মহারাজ কৃষ্ণদেব রায়ের কোনো কিছুই খেতে ইচ্ছা করল না।
তখনই তার মনে পড়ল, সবাই রাময়া সম্পর্কে যা বলে সেটি সঠিক। সকালে ওর মুখ দেখার কারণেই তার রুচি নষ্ট হয়ে গেছে।
রাজামশাই ঠিক করলেন, ওর মতো একজন অশুভ এবং অপদার্থ লোক তার রাজ্যে থাকতে পারবে না। তিনি সৈন্যদের আদেশ দিলেন রাময়াকে ফাঁসিতে ঝোলাতে।
স্বামীর শাস্তির কথা শুনে রাময়ার স্ত্রী তেনালির রামার কাছে সাহায্যের জন্য ছুটে গেলেন। কেঁদে কেঁদে সব কথা খুলে বললেন।
আরও পড়ুন: প্রতিটা কাজ হতে পারে শেষ কাজ – শিক্ষণীয় একটি গল্প
তেনালি রামা বললেন, দেখি কী করা যায়।
পরের দিন সকালে সৈন্যরা অপয়া রাময়াকে ফাঁসিতে ঝোলাতে নিয়ে যাচ্ছিল। পথে তেনালির সঙ্গে দেখা। তেনালি রাময়ার কানে ফিসফিস করে কিছু কথা বলে চলে গেলেন।
ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে সৈন্যরা তার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাইল। রাময়া বললেন, তিনি রাজার কাছে একটি চিঠি পাঠাতে চান।
একজন প্রহরী এসে রাজামশাইকে একটা চিঠি হস্তান্তর করলেন। তাতে লেখা ছিল, যদি আমার মুখ দেখে কারও রুচি চলে যায় আর রাজামশাইয়ের মুখ দেখে কাউকে ফাঁসিতে ঝুলতে হয় তাহলে কে বেশি অশুভ? সে নাকি রাজামশাই?
রাজামশাই বুঝতে পারলেন যে রাময়া কী বলতে চাইছে। তিনি তখনই রাময়াকে মুক্তি দিলেন।