একগুঁয়ে শিকারী: একটি নীতিশিক্ষামূলক গল্প

একগুঁয়ে শিকারী: একটি নীতিশিক্ষামূলক গল্প

এক সময় বিভিন্ন ধরনের পশুপাখিতে ভরা একটি বন ছিল। সেখানে তারা সবাই একসাথে সুখে থাকত। কিন্তু একসময় পাশের গ্রামের এক শিকারী বনের অনেক প্রাণী শিকার করে মেরে ফেলতে শুরু করে। সে খরগোশ শিকার করতে পছন্দ করত কারণ সে খরগোশের চামড়া দিয়ে তৈরি পশমী পোশাক পরতে ভালোবাসত । বনের পশুরা তার ভয়ে থাকত। শিকারীর অন্যসব বন্ধুরাও তাকে বনের প্রাণী, বিশেষ করে খরগোশ, শিকার না করার পরামর্শ দিত কিন্তু একগুঁয়ে শিকারী তাদের কথা কানেও নিত না। শিকারী তাদের দিকে চিৎকার করে বলত, ‘তোমাদের পরামর্শের কোনও দরকার নেই, তোমরা নিজের কাজ কর।’

এক শীতের বিকেলে, শিকারী তার শিকারের সরঞ্জামগুলি, যেমন জাল, ছুরি, বর্শা, দড়ি, তীর এবং ধনুক সাজিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক ঋষি তাকে দেখে থেমে গেলেন। তিনি শিকারীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এগুলো দিয়ে তুমি কী করবে?’ শিকারী উত্তর দিল, ‘আমি খরগোশ শিকার করব এবং তার পশম থেকে ঝলমলে পোশাক তৈরি করব।’ ঋষি শিকারীকে বললেন যে নিরীহ প্রাণী হত্যা করা পাপ এবং তার শিকার বন্ধ করা উচিত নয়তো তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। শিকারী খুব রেগে গেল এবং বলল, ‘আমি শিকার করব এবং কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না। আমাকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।’ এই বলে শিকারী বনের পথে চলে গেল এবং ঋষি সেখানে বসে ধ্যান করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

আরও পড়ুন: গোপাল ভাঁড়ের 10টি সেরা হাসির গল্প

কিছুক্ষণ পরে, শিকারী তার হাতে একটি খরগোশ নিয়ে ফিরে এল আর ধ্যানরত ঋষিকে বলল, ‘দেখ! আমি একটা খরগোশ নিয়ে এসেছি। এখন আমি এটিকে মেরে এর ছাল ছাড়াব। দেখি কে আমাকে শাস্তি দিতে সাহস করে।’ শিকারী যেই খরগোশটিকে মারতে যাবে ঠিক তখনই তার হাত থেকে ছুরিটা ফস্কে গিয়ে তার পায়ে পড়ল । আর শিকারী ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল এবং খরগোশটি পালিয়ে গেল । শিকারীর পা থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয় এবং সে যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। তার নিজের ভুল বুঝতে পারল যে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তাকে তার পাপের জন্য শাস্তি দিয়েছেন। শিকারী ঋষির কাছে ক্ষমা চাইল আর তারপর থেকে শিকার ছেড়ে দিল। সেই বেক্তি তারপর থেকে পশুদের খাওয়ানো এবং যত্ন নেওয়া শুরু করেছিল। সে সবার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলত এবং তাদের সাথে সদয় ব্যবহার করত।’

একগুঁয়ে শিকারী গল্প থেকে কি শিখলাম

আমরা শিখলাম: একটি ভুল জিনিসের প্রতি একগুঁয়ে হওয়া উচিৎ নয়। শিকারীকে তার একগুঁয়েমির জন্য ভুগতে হয়। আমরা আরও শিখেছি যে অপ্রয়োজনে প্রাণী হত্যা একটি পাপ এবং সেই পাপের শাস্তি সর্বদা পেতে হয়। সমস্ত মানুষের সাথে সদয় আচরণ করা এবং ভদ্র হওয়া হল ভাল গুণ যা আমাদের সকলেরই থাকা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top