বাংলায় ছোটদের জন্য কিছু শিক্ষণীয় ছোট গল্প বা অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প যা ভবিষ্যত জীবনে চলার পথে উত্সাহ জাগাতে পারে এমন ৯টি ছোটগল্প দেওয়া হল। আশাকরি বর্তমান সময়ে এগুলি উপযোগী হবে।
বাছাই করা ৯টি অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প
1. অন্য ভাবে ভাবুন – Think out of the box
গল্পটি শত বছর পুর্বে ইতালির একটি ছোট শহরের একজন ব্যাবসায়ীর মেয়ের বুদ্ধিদীপ্ত কাজের। একজন বৃদ্ধ ব্যাবসায়ী তার ব্যাবসার জন্য শহরের একজন রক্তচোষা মহাজনের থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ।কিন্তু কিন্তু কয়েক বার টানা লোকসান হওয়ায় এবং মহাজনের সুদের টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে বেরে যাওয়ায় ব্যাবসায়ীর জন্য টাকা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যায়। সে সময় মতো টাকা পরিশোধ করতে পারছিলো না। এমন সময় মহাজন বললো সে এক শর্তে সকল কর্জ মাফ করে দিবে, যদি ব্যাবসায়ী তার মেয়েকে মহাজনের সাথে বিয়ে দেয়।
মহাজন মানুষ হিসেবে ভাল ছিল না তাই ব্যাবসায়ীর প্রস্তাবটি পছন্দ হয়নি। তখন মহাজন বললো ঠিক আছে তাহলে চলুন আমরা আপনার বাগানে থাকা সাদা এবং কালো নুড়ি পাথর দিয়ে একটি ভাগ্য পরীক্ষা করি। আমি এই বাগানের পাথুরে রাস্তা থেকে একটি সাদা এবং একটি কালো পাথর নিয়ে একটি ব্যাগে রাখবো। সেখান থেকে আপনার মেয়ে একটি পাথর তুলবে। যদি সে কালো পাথরটি তোলে তবে সে আমাকে বিয়ে করবে এবং আপনার সব ঋণ আমি ছেড়ে দিবো এবং সে যদি সাদা পাথরটি তোলে সে ক্ষেত্রেও আমি আপনার ঋণ মুকুব করে দেব কিন্তু আপনার মেয়ের আমাকে বিয়ে করতে হবেনা।
এমন সময় মহাজন যখন বাগানের রাস্তাটি থেকে নুড়ি পাথর থলেতে রাখার জন্য তুলছিল তখন মেয়েটি দেখে ফেলে যে, মহাজন একটি সাদা এবং একটি কালো পাথরে বদলে দুইটিই কালো পাথর নিয়ে ব্যাগে রেখেছিল । এই অবস্থায় মেয়েটির সামনে তিনটি পথ ছিল:-
- ব্যাগ থেকে পাথর বাছাই করতে অস্বীকার করা।
- ব্যাগ থেকে উভয় নুড়ি পাথর বের করে নিয়ে মহাজনের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করে ফেলা।
- ব্যাগ দুইটিই কালো পাথর আছে জেনেও একটি পাথর তুলে বাবার স্বাধীনতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা।
কিন্তু এই প্রতিটি পদক্ষেপেই তার এবং তার বাবার জন্য বিপদ ডেকে আনতো। কিন্তু মেয়েটি যা করলো তাতে মহাজন বোকা বনে গেল।
মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটি পাথর বের করে সেটি দেখার আগেই অজ্ঞতাবশত হাত থেকে পাথুরে রাস্তায় ফেলে দিলো। আর এমন ভান করলো যে পাথরটি যেন দুর্ঘটনাক্রমে নিচে পড়ে গেছে এবং রংটি দেখার সুযোগ হয়নি। সে মহাজনকে বললো যে, “দেখুন তো, কি বোকার মতো কাজ করলাম, পাথরের রংটি দেখার আগেই হাত থেকে পরে গেলো। আমি কি রং এর পাথরটি তুলেছিলাম যাচাই করতে ব্যাগটি চেক করুন।” ব্যাগে যেহেতু ২টি কালো পাথরই ছিল, তাই মহাজনের শর্ত মোতাবেক পড়ে যাওয়া পাথরটি সাদা হওয়ার কথা। এভাবেই মেয়েটি এবং তার বাবা মহাজনের ছল চাতুরী থেকে রেহাই পেল।
অন্য ভাবে ভাবুন গল্পের শিক্ষা: সব সময় কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার উপায় থাকে । শুধু মাথা ঠান্ডা করে একটু আউট অফ দ্যা বক্স চিন্তা করতে হয়। আমাদের যে আপশন গুলো দেয়া হয়েছে এর বাইরেও আপশন থাকতে পারে।
2. নিজেকে বদলাতে শিখুন – Change yourself, the world will be changed
একবার এক রাজা চোখের সমস্যা নিয়ে খুবই সমস্যায় ছিলেন। তাই রাজা অনেক জায়গায় চেষ্টা করেন কিন্তু কোনো ভাবেই চোখ ভাল করতে পারছে না।
বহুদিন পর রাজা সন্ধান পেলেন যে তার রাজ্যের বনে এক সন্ন্যাসি থাকেন। যিনি রাজার চোখের সমস্যা সব ঠিক করে দিতে পারেন ।
অবশেষে রাজা গেলেন সেই সন্ন্যাসীর কাছে, গিয়ে বললেন সন্ন্যাসী আমার চোখের সমস্যা ঠিক করে দিন। সন্ন্যাসী দেখে বললেন “রাজন আমি আপনার সমস্যা বুঝতে পেরেছি।”
“আপনি এক কাজ করুন এখন থেকে শুধু লাল জিনিসের দিকে তাকাবেন । শুধু লাল রঙ দেখবেন, তারপর দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে।” রাজা বললো আচ্ছা ঠিক আছে।
রাজা রাজ্যে ফিরে গিয়ে তার রাজপ্রাসাদ পুরোটা এবং সবকিছু লাল রঙ করে ফেললো। কিছুদিনপর আস্তে আস্তে রাজার চোখ ভালো হতে লাগলো।
তখন রাজা খুশি হয়ে তার সৈন্যদেরকে বললো যাও সেই সন্ন্যাসীকে নিয়ে আাসো আমি তাকে পুরস্কৃত করতে চাই।
তারপর সন্ন্যাসী যখন আসলেন তখন সৈন্যরা বালতি ভরে লাল রঙ দিয়ে তাকে রাঙিয়ে দিলো।
সন্ন্যাসী রাজার কাছে এলে, রাজা তাকে জিজ্ঞাস করলো- “কেমন আছেন?”
তখন সন্ন্যাসী বললেন- “দেখতেই তো পাচ্ছেন”, তিনি রাগান্বিতস্বরে বললেন, “রাজা আপনি আমাকে এমন লাল রঙ দিয়ে রাঙিয়ে দিতে বললেন কেনো”?
রাজা বললেন- “কেনো আপনিইতো বলেছেন লাল রঙ দেখতে, রং না দিলে, আপনাকে দেখলেতো আমার চোখে সমস্যা হত তাই।“
তখন সন্ন্যাসী বললেন- “রাজা আপনিতো একটা লাল চশমা পরলেই পারতেন ৷”
রাজা বললেন- “আরে সত্যিই তো!” রাজা লজ্জায় পরে গেলেন।
তারপর সন্ন্যাসী বললো- “দেখেছেন রাজা আমরা সমস্যায় পরলে আশে পাশের সব কিছু পরিবর্তন করতে চাই কিন্তু সমস্যার সমাধান যে আমাদের ভিতরই আছে তা লক্ষ করিনা”।
আমাদের নিজেদের বদলাতে বড় কোনো দেশে যেতে হয় না নিজের দেশে থেকেই নিজেকে বদলাতে পারবো। আমরা বদলালে আমাদের পরিবার বদলাবে, আমদের সমাজ বদলাবে আর সমাজ বদলালে আমাদের দেশ বদলে যাবে।
নিজেকে বদলাতে শিখুন গল্পের শিক্ষা: আমরা নিজেদের অনেক সমস্যা গুলো চাইলেই নিজের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন এনে প্রতিকার করতে পারি।
আরও পড়ুন: বাবুর্চির বুদ্ধি – হাততালি দিলে পাতের বকটা উড়ে যেত না?
3. তুলনা করার অভ্যাস বর্জনীয় – Stop Comparing Yourself to Others
তুলনা করার অভ্যাস বর্জনীয় – একটি অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প
এক বনে একটি কাক বাস করতো। সে তার জীবন নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট ছিল।
কিন্তু একদিন সে একটি রাজহাঁস দেখতে পেল।… …
নদীর এ পার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ও পারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
আহা! রাজহাঁস কতই না সুন্দর! কাকটি ভাবলো। নিশ্চয়ই সে এ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী পাখি।
কাক তার এই ভাবনার কথা রাজহাঁসকে জানালো।
“আসলে”, রাজহাঁস জবাব দিলো, “আমি ভাবতাম আমিই বুঝি এখানকার সবচেয়ে সুখী পাখি, যতক্ষণ না আমি একটি টিয়াকে দেখলাম।… … যার গায়ে দু’ধরনের রং আছে। তাই এখন আমি মনে করি, টিয়াই হলো সৃষ্টির মাঝে সবচেয়ে সুখী পাখি।”
কাক এরপর গেল টিয়ার কাছে। টিয়া তাকে বললো, “আমি ছিলাম খুব খুব সুখী, যতক্ষণ না আমি ময়ূরকে দেখতে পেলাম।… … আমার গায়ে তো মাত্র দু’টি রং, আর ময়ূরের শরীরে কত বর্ণেরই না সমাহার!”
কাক এরপর চিড়িয়াখানায় গেল ময়ূরের সাথে দেখা করতে। সেখানে সে দেখতে পেল, ময়ূরকে দেখতে শত শত মানুষ ভিড় জমিয়েছে।
সবাই চলে যাওয়ার পর, কাক ময়ূরের কাছে গেল… …
“ও ময়ূর, তুমি দেখতে কতই না সুন্দর! তোমাকে দেখতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় জমায়। আর আমি? আমাকে দেখলেই মানুষ দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। তুমি নিশ্চয়ই জগতের সবচেয়ে সুখী পাখি।”
ময়ূর জবাব দিলো, “আমিও ভাবতাম, আমিই বোধহয় এই গ্রহের সবচেয়ে সুন্দর এবং সুখী পাখি। কিন্তু এই সৌন্দর্যের কারণে আমাকে খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে।
আমি এই চিড়িয়াখানা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং বুঝতে পেরেছি কাকই হচ্ছে একমাত্র পাখি যাকে কখনোই খাঁচায় বন্দি করা হয় না।
তাই গত ক’দিন যাবত আমি ভাবছি, ইশ! আমি যদি কাক হতাম, তাহলে যেখানে খুশি ঘুরে বেড়াতে পারতাম।”
তুলনা করার অভ্যাস বর্জনীয় গল্প থেকে শিক্ষা: অহেতুক অন্যদের সাথে নিজেদের তুলনা করলে কেবল দুঃখই বাড়ে।
4. প্রজাপতির গল্প – Struggle Makes You Stronger
প্রজাপতির গল্প – একটি অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প
একবার একজন মহানুভব ব্যাক্তি তার বাগানে একটি প্রজাপতি গুটি (ডিম) দেখতে পেলেন। তিনি দেখতে পেলেন প্রজাপতিটি তার গুটি থেকে বের হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু বের হতে পারছেনা। সদ্য জন্মানো প্রজাপতিটি অনেক চেষ্টা এবং পরিশ্রম করছে কিন্তু যে ডিম বা গুটি থেকে সে জন্মাচ্ছিল সেটি থেকে সে তার শরীরের বাকি অংশ বের করতে পারছে না । একটা অবস্থায় গিয়ে মনে হচ্ছিল হয়তো প্রজাপতিটি আর বের হতেই পারবেনা, সে দাপাদাপি করেও থেমে গেছে। এ দৃশ্য দেখে লোকটির অনেক মায়া হলো। সে গিয়ে গুটির বাকি অংশটি একটি কঁচি দিয়ে কেটে প্রজাপতিটিকে বের করে ফেললো।
কি মনে হচ্ছে লোকটি প্রজাপতিটির উপকার করেছে তাইনা? আসলে আপাত দৃষ্টিতে এটি উপকার মনে হলেও প্রজাপতিটির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে এই লোকটির জন্য । প্রজাপতি গুটি থেকে বের হয়ে আসার জন্য যে চেষ্টা করছিলো তাতে প্রজাপতিটির শরীর আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। তার ডানা ঝাপটানোর ফলে গুটিতে থাকা ঈশ্বর প্রদত্ত তরল পদার্থ তার ডানা আরও শক্ত হতে সাহায্য করছিলো। কিন্তু এই লোকটি যখন এটিকে বিনা পরিশ্রমে বের হয়ে আসতে সহায়তা করলো তখন তার ডানা রয়ে গেল অপরিপক্ক। প্রজাপতিটির বাকি জীবনে কখনো ঠিক মতো উড়তেই পারেনি, কারন তার ডানা উড়ার জন্য যথেষ্ট্ মজবুত ছিল না।
প্রজাপতির গল্প থেকে শিক্ষা: জীবনের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা ভবিষ্যতের মুখোমুখি হওয়ার জন্য যোগ্য ও শক্তিশালী করে।
আরও পড়ুন: ‘ডেঞে পিঁপড়ের মন্তব্য’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ব্যঙ্গ-কৌতুক
5. শেকলে বাধা হাতি – Believe in Yourself
একদা এক বাচ্চা ছেলে তার বাবার কাছে বায়না ধরলো সে সার্কাস দেখতে যাবে। বাবা তাকে সার্কাস দেখাতে নিয়ে গেলেন। সার্কাস শুরুর আগে বাবা তার ছেলেকে সার্কাসের তাবুর বাইরে রাখা বিভিন্ন পশু পাখির খাঁচার সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে পশুপাখি দেখাচ্ছিলেন। দেখতে দেখতে তারা হাতির সামনে চলে আসলো। তারা দেখতে পেল হাতিটি খাঁচায় বন্দী করে রাখার বদলে একটি সরু শিকল দিয়ে পায়ে বাধা আছে, যেটি হাতি চাইলেই ছিড়ে পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো হাতিটি সে চেষ্টাই করছেনা।
এটি দেখে ছেলে খুব অবাক হলো এবং তার বাবাকে এর কারন জিজ্ঞাসা করলো। বাবা হাতির মাহুতকে ( যিনি হাতির দেখাশুনা করেন ) ডেকে এর কারন জিজ্ঞাসা করলেন। হাতির মাহুত উত্তর দিল – যখন এই হাতি গুলো অনেক ছোট ছিল, তখন আমরা তাদের এই ধরনের সরু শিকল দিয়েই বেধে রাখতাম। সে সময় তারা তা ছেঁড়ার অনেক চেষ্টা করতো এবং ব্যার্থ হতো। সে বয়সে এই শিকল তাদের আটকে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ অবস্থায় যখন তারা বড় হতে থাকে তারা বিশ্বাস করে নেয় যে এই শিকল ছেঁড়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই এখন তারা এই শেকল এর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হলেও তাদের বিশ্বাস এর কাছে তারা বাঁধা পরে আছে এবং তাই ছিঁড়তে চেষ্টা করেনা।
গল্পের অনুপ্রেরণা: সফল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো এটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা যে আপনি সফল হবেন। বাধা যতই আটকে রাখতে চেষ্টা করুক, সফলতার বিশ্বাস মনে নিয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
6. কৃষক ও দোকানদার – As you Sow, So Shall you Reap
গল্পটি একজন কৃষকের যে প্রতিদিন একটি রুটির দোকানে এক কেজি করে পনির বিক্রি করতো এবং এক কেজি করে রুটি কিনে আনতো ।
রুটির দোকানদার এর সাথে তার অনেক পুরোনো পরিচয় হওয়ায় দোকানদার তার থেকে পনির নেয়ার সময় আর মাপ দেয়ার প্রয়োজন মনে করতো না এবং কৃষকও তার থেকে এক কেজি রুটি কোন মাপঝোপ ছাড়াই নিয়ে চলে যেতো ।
তো একদিন পনিরের দোকানে এক নতুন কর্মচারী চাকুরি নিলো, কৃষক যখন তার পনির বিক্রি করতে আসলো তখন সে পনির কৃষকের থেকে নেয়ার পর সেটা ওজন করে দেখলো। ওজন করতে গিয়ে দেখা গেলো পনির এক কেজির চেয়ে ১০০ গ্রাম কম আছে।
সে তার দোকান মালিককে ঘটনা জানালো এবং দোকানদার খুব রেগে গেলো এবং পরের দিন কৃষক আসার পর সে তাকে খুব বকাঝকা করলো। সে বাজারে বিচার ডেকে নালিশ করলো যে কৃষক তাকে ঠকিয়ে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে কম পনির দিয়েছে।
তখন বিচারক কৃষকের কাছে এই চুরির কারন জানতে চাইলো । তখন কৃষক বললো – “আমি খুব গরীব মানুষ হুজুর , কিন্তু চোর নই।
আমার বাসায় পরিমাপ করার কোন পাল্লা নেই, তাই প্রতিদিন রুটির দোকান থেকে যে ১ কেজি রুটি নিয়ে যাই সেটি দিয়েই ওজন করে দোকানদারকে সমপরিমান পনির দিয়ে যাই।
তাই আমার জানা ছিলনা যে এখানে ১০০ গ্রাম রুটি কম ছিল। এরপর অনুসন্ধান করে কৃষকের কথা সত্য প্রমাণিত হলো এবং দোকানদার সবার সামনে লজ্জিত হলো ।
গল্পের শিক্ষা: যেমন কর্ম তেমন ফল ।
আরও পড়ুন: গোপাল ভাঁড়ের গল্প – 10টি সেরা হাসির গল্প
7. সমান মূল্যায়ন আবশ্যক – Never Judge A Book by Its Cover
গল্পটি অনেকদিন আগের আমেরিকার এক বিকেলের, যখন আইসক্রিম সান্ডের দাম অনেক কম ছিল
একটি ১০ বছরের ছেলে একটি হোটেলের আইসক্রিম কর্ণারে ঢুকে একটি টেবিলে বসল।
একজন ওয়েটার তার কাছে অর্ডার নিতে আসলো।
ছেলেটি তার কাছে জানতে চাইলো- “একটি আইসক্রিম স্যান্ডির দাম কত?”
ওয়েটার উত্তর দিল, “৫০ সেন্ট,”।
ছোট ছেলেটি তার পকেট থেকে কতগুলো কয়েন বের করে গুনতে শুরু করলো।
তারপর জিজ্ঞাসা করলো, “একটি সাধারণ আইসক্রিমের দাম কত?”
হোটেলে আসা কিছু গেস্ট তখন টেবিলের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং একারনে ওয়েটার কিছুটা তারাহুড়ো করছিল, কারন তাদের থেকে যত্নের সাথে অর্ডার নিলে সে হয়তো কিছু টিপ পেতে পারে।
সে বিরক্তিরস্বরে বলল- “৩৫ সেন্ট” ।
ছোট ছেলেটি আবার কয়েনগুলো গুনে নিল। এবং বললো “আমি সাধারণ আইসক্রিমই নেব”।
ওয়েটার আইসক্রিম নিয়ে এল, এবং টেবিলে বিলটা রেখে তাকে কিছু না বলেই চলে গেল। ছেলেটি আইসক্রিমটি খেয়ে, ক্যাশিয়ারকে টাকা দিয়ে চলে গেল।
ওয়েটার লোকটি যখন ফিরে এলে, সে টেবিলটি মুছতে শুরু করে এবং তারপর যা দেখলো তাতে তার চোখে জল আসলো।
সেখানে, খালি প্লেটেরর পাশে সুন্দরভাবে রাখা ছিল, ১৫ সেন্ট – তার টিপ।
সমান মূল্যায়ন আবশ্যক থেকে শিক্ষা: কাউকে উপরের রুপ দেখে অবহেলা করা উচিত নয়।
8. পূর্ণ চেষ্টা সাফল্য আনে – Always Try Your Best
একবার দুই বন্ধু রাজু এবং সাজু গ্রাম থেকে দূরে খেলতে এসেছে। রাজুরর বয়স ৫ এবং সাজুর বয়স ৭ বছর। তারা একটি পুরোনো কূপের পাশে খেলছিল।
এমন সময় সাত বছর বয়সী সাজু খেলতে খেলতে কূপে পরে যায়৷ এবং পাচ বছর বয়সী রাজু তাকে কূপ থেকে পানি ওঠানোর জন্য যে বালতি ও দড়ি ব্যাবহার করা হয় সেটি দিয়ে টেনে তোলার চেষ্টা করতে লাগল ।
কূপে পড়ে যাওয়া বয়সে বড় ছেলেটি ওজনেও রাজুর চেয়ে বেশি ছিল।
ওরা যেহেতু গ্রাম থেকে অনেক দূরে চলে এসেছিল তাই সাহায্য করার জন্যও কেউ ছিল না আসে-পাশে।
তাই বয়সে ছোট ছেলেটি তার বন্ধুর কান্না দেখে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দড়ি ধরে টানতে শুরু করলো।
সে তার মনের এবং দেহের সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও শক্তি যেন রশিতে কেন্দ্রীভুত করে ফেলেছে৷ তার শুধু একটাই চিন্তা, এই দড়ি টেনে তার বন্ধুকে তুলতেই হবে, না হলে তার বন্ধু মারা যাবে।
ছেলেটি কিছুক্ষন চেষ্টার পর বন্ধুকে উপরে তুলে আনলো ।
তারা দুজনেই গ্রামে এসে সবাইকে এ ঘটনা বলতে লাগলো।
কিন্তু গ্রামের সবাই তাদের কথা অবিশ্বাস করলো৷ বললো অনেক দুষ্টুমি হয়েছে আর মিথ্যে বলতে হবেনা ।
“সে তোমার ওজনে প্রায় দ্বিগুণ তুমি তাকে কিভাবে টেনে তুলবে?”
তারা সবাইকে বললো এটা মিথ্যা নয়৷ শুধু গ্রামের একজন বৃদ্ধ তাদের কথায় বিশ্বাস করলো ।
জ্ঞানী হিসেবে তার অনেক পরিচিতি আছে, সবাই যখন শুনলো যে সেই বৃদ্ধ বলেছে ঘটনা সত্য তাহলে জেনে আসা যাক, কি কারনে তিনি এটা বললেন।
তখন বৃদ্ধ সবাইকে বললো “মানুষের বিপদে যখন অন্য কোথাও থেকে সাহায্যের আশা থাকেনা, যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন মানুষ তার সাধ্যের বাইরে গিয়েও চেষ্টা করতে পারে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাফল্য পায়।”
9. জ্ঞানীর দেওয়া সমস্যার সমাধান
একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি তার আস্তানায় ধন্যমগ্ন থাকতেন। এবং বিকেলের সময় তিনি বিভিন্ন মানুষের সমস্যার কথা শুনে তাদের বিভিন্ন উপদেশ দিতেন এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বলে দিতেন। কিছু লোক সমাধান জানার পরও প্রায়ই একই সমস্যা নিয়ে তার কাছে বারংবার আসতে শুরু করলো। এসে কান্নাকাটি করতো।
একদিন জ্ঞানী ব্যাক্তিটি তাদের একটি কৌতুক বললেন, উপস্থিত সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।
কয়েক মিনিট পর আবার সেই একই কৌতুক বললেন, এবার অল্প কিছু লোক হাসলো।
যখন তিনি একটুপর তৃত্বীয়বারও একই কৌতুক বললেন কেউই হাসলো না।
তখন তিনি বললেন-
“তোমরা একই কৌতুকে বার বার হাসতে পারোনা, তবে একই সমস্যায় বার বার কেন কাঁদো?”
প্রেরণামূলক শিক্ষা: দুশ্চিন্তা, হায়-হুতাশ করা শুধুমাত্র শক্তি এবং সময় অপচয়। এটি কখনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনা।