মালিন কুন্দাং – মূল গল্পটি পশ্চিম সুমাত্রার পদাং-এর এয়ার মানিস সমুদ্র সৈকতকে কেন্দ্র করে তৈরি। এটি মালিন কুন্দাং নামে এক অকৃতজ্ঞ পুত্রের গল্প, যাকে তার মা পাথরে পরিণত করার জন্য অভিশপ্ত করে।
মালিন কুন্দাং – ইন্দোনেশিয়ার একটি লোককথা
অনেক দিন আগে পশ্চিম সুমাত্রার পদাং শহরের এয়ার মানিস সৈকতের একটি জেলে পাড়ার একটি গল্প। সেখানে মান্দে রুবায়াহ নামে এক বিধবা তার ছেলে মালিন কুন্দাংকে নিয়ে থাকতেন।
মান্দে রুবায়াহ তার ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসতেন এবং আদর করতেন। মালিন ধীরে ধীরে একজন পরিশ্রমী এবং মায়ের প্রতি অনুগত ছেলে হয়ে ওঠে।
যখন মালিন একটু বড় হল, একবার এয়ার মানিস সৈকতে একটি বড় জাহাজ নোঙর করেছিল। তখন সে তার মায়ের কাছে ভ্রমণে যাওয়ার অনুমতি চাইল।
তার মা প্রথমে অনুমতি দিতে চাননি, কারণ তিনি ভয় পেয়েছিলেন যে তার ছেলের যদি কিছু হয়ে যায় । কিন্তু মালিন এখন বড় হয়েছে, সে নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্য তার মায়ের আশীর্বাদ প্রার্থনা করল। ভারী মনে হলেও মান্দে রুবায়াহ অবশেষে মালিনকে যেতে দিলেন।
তিনি সবসময় প্রার্থনা করতেন, যাতে তার ছেলে নিরাপদে থাকে এবং তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। কিছু দিন পর যখনই কোন জাহাজ নোঙর করত, তিনি সেখানে তার ছেলের খবর জানতে চাইতেন।
বহু বছর ধরে মান্দে রুবায়াহ এভাবেই খবর জানতে চাইতেন, কিন্তু কোনো উত্তর পেতেন না। এভাবেই সময়ের সাথে সাথে তিনি বুড়ো হয়ে যেতে থাকেন , তার পিঠ নুয়ে পড়ে । একদিন মান্দে রুবায়াহ কোন এক জাহাজের ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে খবর পেলেন যে মালিন এখন একটি ধনী অভিজাতের কন্যাকে বিয়ে করেছে।
অবশেষে, এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে দূর থেকে একটি বিশাল এবং সুন্দর জাহাজ সৈকতের দিকে আসতে দেখা গেল। গ্রামপ্রধানরা তাকে স্বাগত জানানোর আগে, মালিনের মা আগে এগিয়ে গেলেন।
তিনি তৎক্ষণাৎ মালিনকে জড়িয়ে ধরলেন, যেন আবার ছেলেকে হারিয়ে ফেলবেন এমন ভয়ে। মালিন হতবাক হয়ে গেলেন, কারণ তাঁকে একজন বৃদ্ধা ছেঁড়া কাপড় পরিহিত মহিলা জড়িয়ে ধরেছে।
তিনি বিশ্বাস করতে পারলেন না যে ওই মহিলা তাঁর মা। কথা বলার আগেই তাঁর সুন্দরী স্ত্রী রাগে বলল,
‘এই কুৎসিত মহিলা কি তোমার মা? তুমি প্রথমেই কেন আমাকে মিথ্যা বলেছিলে! তুমি তো বলেছিলে তোমার মা আমার মতোই এক অভিজাত!’
স্ত্রীর কঠোর কথা শুনে মালিন কুন্দাং সঙ্গে সঙ্গে তার মাকে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘পাগল মহিলা! আমি তোমার ছেলে নই!’
মান্দে রুবায়াহ ছেলের এই আচরণ বিশ্বাস করতে পারলেন না। তিনি হাঁটু গেড়ে বসে বললেন,
‘মালিন, মালিন, আমার ছেলে। আমি তোমার মা! তুমি এমন করলে কেন?!’
মালিন কুন্দাং তার মায়ের কথা কানে নিল না। সে তার মাকে অস্বীকার করল । স্ত্রীর সামনে সে লজ্জা পাচ্ছিল। মালিন তার মাকে পা দিয়ে দূরে সরিয়ে বলল,
“পাগল মহিলা! আমার মা তোমার মতো গরিব এবং মলিন নয়!”
বৃদ্ধা বালিতে পড়ে কাঁদলেন আর ব্যথা পেলেন। যাঁরা এই দৃশ্য দেখলেন, তাঁরা হতবাক হয়ে নিজেদের বাড়ি ফিরে গেলেন। মান্দে রুবায়াহ অজ্ঞান হয়ে বালিতে পড়ে রইলেন।
যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন, দেখলেন এয়ার মানিস সৈকত ফাঁকা ছিল। মালিনের জাহাজ দূরে চলে যাচ্ছিল। মান্দে রুবায়াহ ভাবতেও পারেননি, যাকে তিনি এত ভালোবাসতেন, সে এমন কাজ করবে। তাঁর হৃদয় ব্যথিত ও আহত হল।
আরও পড়ুন: চু কোই ও বট গাছ – ভিয়েতনামের একটি সুন্দর রূপকথা
তারপর তিনি আকাশের দিকে হাত তুলে বললেন,
‘হে প্রভু, যদি সে আমার ছেলে না হয়, আমি তাকে ক্ষমা করে দিই। কিন্তু যদি সে আমার ছেলে মালিন কুন্দাং হয়, তবে তোমার ন্যায় বিচার চাই, হে প্রভু!’
কিছুক্ষণের মধ্যেই, সমুদ্রে আগের উজ্জ্বল রোদলা আবহাওয়া হঠাৎ অন্ধকারে ঢেকে গেল। প্রবল বৃষ্টি নামল। বড় ঝড় এল, মালিন কুন্দাংয়ের জাহাজে আঘাত করল। তারপর একটি বজ্রপাতের শব্দ হল। সেই মুহূর্তে জাহাজটি ধ্বংস হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
পরের দিন সকালে, যখন পূর্ব আকাশে সূর্য উঠল, ঝড় থেমে গিয়েছিল। সৈকতে ভাঙা জাহাজের টুকরো পড়েছিল, যা পাথরে পরিণত হয়েছে। এটি মালিন কুন্দাংয়ের জাহাজ! তার মধ্যে একটি পাথর এমন দেখাচ্ছিল যেন একজন মানুষের দেহ।