
লাওসের লোককথা শুধু নয় যেকোন দেশের লোককাহিনী হল সুপরিচিত গল্প যা প্রায়শই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাচ্চাদের কাছে বলা হয়ে আসছে। এগুলি এমন গল্প যা মানুষ একে অপরকে লিখিতভাবে নয় বরং মৌখিকভাবে বলে। শিশুদের জন্য লোককাহিনী জীবনের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে বলে। লোককাহিনীর গল্পগুলিতে দুঃখ, আনন্দ, নায়ক, জাদু এবং খলনায়ক থাকতে পারে। বিভিন্ন লোককাহিনী এবং গল্প শিশুদের বিভিন্ন শিক্ষা দেয়। প্রতিটি অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্য এবং লোককাহিনী রয়েছে।
লাওসের সেরা ৫ টি লোককাহিনী
আপনি কি কখনও লাওসের লোককাহিনী শোনার চেষ্টা করেছেন? যদি না করেন, তাহলে আমরা এখানে আপনাকে 5টি লাওসের লোককাহিনী একটি সারসংক্ষেপ দেব যা নীতিশাস্ত্রের সাথে আকর্ষণীয় বিভিন্ন শিক্ষাও দেয়।
১. জাদুর সাদা রাজহাঁস – লাওসের লোককথা
একদিন এক গরিব কৃষক মাছ ধরতে গেল। তার হাতে ছিল লম্বা জাল, মাথায় জড়ানো ছিল একটা কাপড়। সে জাল ফেলে মাছ ধরার চেষ্টা করল। একবার ফেলল — কিছুই না। আবার ফেলল — তাও কিছুই না। তিনবার, চারবার — তবুও কিছুই উঠল না!
শেষবার সে জাল ফেলল আর বলল, “এইবার যদি কিছু না পাই, তবে আর আসব না!”
সে জাল টানল… টানল… টানতেই থাকল… জাল অনেক ভারী মনে হচ্ছিল।
অবশেষে জাল তুলে দেখে, একখানা চকচকে সাদা পাথর!
পাথরটা ছিল খুব সুন্দর। কৃষক সেটি বাড়ি নিয়ে গিয়ে মাথার ওপরে আলমারিতে রেখে দিল। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে উঠে দেখে, পাথরটা আর পাথর নেই — সেটা হয়ে গেছে এক সাদা রাজহাঁস! রাজহাঁসটি বলল,
“চলো, আমি তোমাকে এক ফুলের বাগানে নিয়ে যাব। তুমি যা খুশি, নিতে পারো!”
কৃষক রাজহাঁসের পিঠে উঠে বসল, রাজহাঁস উড়ে গেল। বাগানে গিয়ে কৃষক কয়েকটি ফুল তুলল। প্রথমটা তুলতেই মনে হলো ভারী। দ্বিতীয়টা তুলল — আরও ভারী। তৃতীয়টা তুলতেই ভাবল,
“না, আর তুলব না। রাজহাঁস আমাকে নিয়ে উড়তে পারবে না।”
সে রাজহাঁসের পিঠে চড়ে বাড়ি ফিরে এল। রাজহাঁস উড়ে চলে গেল। আর কৃষক যখন ফুলগুলো ঘরে রাখল, দেখল — ফুলগুলো সোনা হয়ে গেছে! কৃষক হয়ে গেল ধনী!
এই খবর তার এক বন্ধু শুনে গেল। সে বলল, “আমিও তো পারি ধনী হতে!”
পরদিন সে গিয়েই জাল ফেলল নদীতে। অনেকবার ফেলার পর পেয়ে গেল একটা সাদা পাথর। সে খুশিতে লাফিয়ে উঠল! পাথরটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখে দিল।
পরদিন সকালেই সেই পাথর হয়ে গেল রাজহাঁস। রাজহাঁস বলল,
“চলো, তোমাকেও ফুলের বাগানে নিয়ে যাই।”
সে রাজহাঁসের পিঠে উঠে বসল। বাগানে গিয়ে প্রথমে তিনটি ফুল তুলল, তারপর বলল,
“আরও নেব! যত পারি নেব!”
সে দুই হাতে ফুল ভরল, যত পারল তুলল। তারপর বলল,
“এগুলো রেখে আবার আসব।”
রাজহাঁস কষ্ট করে তাকে বাড়ি পৌঁছে দিল। লোকটা বলল, “তুই এখানেই থাক, আমি আবার আসব।”
সে ঘরে ফুল রেখে বাইরে এল — রাজহাঁস তখন আর নেই!
ফিরে গিয়ে দেখে — সব ফুলই সাধারণ, একটাও সোনা হয়নি।
লোভ করলে লাভ নয়, বরং ক্ষতি হয়। পরিমিতি ও কৃতজ্ঞতাই সত্যিকারের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।
‘জাদুর সাদা রাজহাঁস’ গল্পের নৈতিক শিক্ষা: লোভ করলে লাভ নয়, বরং ক্ষতি হয়। পরিমিতি ও কৃতজ্ঞতাই সত্যিকারের সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।
আরও জানুন: পারস্যের লোককাহিনী – চাষীর ছেলে ও জাদুকর
২. প্রজাদের স্বপ্নপূরণ : লাওসের একটি লোককাহিনী
এক সময় ফারানাসি নামে এক রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের রাজা ফ্রোম্মথাত ছিলেন খুবই মহান ও দয়ালু। তার রাজত্বে সবাই সুখে-শান্তিতে বাস করত। রাজা তার প্রজাদের সব কিছু দিতেন—ভালো খাবার, ভালো পোশাক, ঘরবাড়ি, নিরাপত্তা।
একদিন রাজা ভাবতে লাগলেন,“আমি কি আমার প্রজাদের সব কিছু দিয়েছি?”
তিনি নিজেই উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, সবই দিয়েছি… তবে… তাদের স্বপ্ন তো পূরণ করিনি!”
তখন রাজা ঘোষণা করলেন “আজ থেকে, যার যে স্বপ্ন আছে—আমাকে বলো। আমি সেই স্বপ্ন সত্যি করে দেব।”
পরদি1ন থেকেই রাজ্যের মানুষ রাজপ্রাসাদে এসে নিজেদের রাতে দেখা স্বপ্ন বলত, আর রাজা সেই স্বপ্ন পূরণ করতেন।
একদিন এক বৃদ্ধ এল। সে বলল, “মহারাজ, গত রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি, আমি রাজ্যের সবচেয়ে ধনী লোকের মেয়েকে বিয়ে করেছি।”
রাজা বললেন, “ঠিক আছে। আগামীকাল আমি ধনী লোকটিকে ডাকব এবং তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করব।”
বৃদ্ধ আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল! ভাবল, “ওই সুন্দর তরুণী মেয়েটা এখন আমার স্ত্রী হবে!”
বাড়ি ফেরার সময় সে ওই ধনী লোকের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। সে থেমে গিয়ে বলল,
“গত রাতে স্বপ্নে দেখেছি আমি তোমার মেয়েকে বিয়ে করেছি, এবং রাজা বলেছেন তিনি সেই বিয়ের আয়োজন করবেন।”
ধনী লোক হতবাক হয়ে গেল, কিন্তু মেয়েকে ডেকে বিষয়টি জানাল।
মেয়েটি খুব বুদ্ধিমতী ছিল। সে হাসিমুখে বলল, “প্রিয় দাদু, যদি রাজা আদেশ দেন, তাহলে তো মানতেই হবে। তবে আপনি এখন বাড়ি ফিরে যান। আমি রাজআদেশ পেলেই আপনার স্ত্রী হব।”
বৃদ্ধ খুশিতে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে গেল।
মেয়ের বাবা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল “তুমি কি সত্যিই রাজাকে মান্য করে তাকে বিয়ে করবে?”
মেয়েটি বলল “না বাবা, সে তো আমার দাদুর বয়সী! আমি তাকে বিয়ে করতে পারি না। তবে আমাদের একটা উপায় বের করতে হবে।”
সারা রাত ধরে তারা চিন্তা করল। শেষমেশ মেয়েটি এক অসাধারণ বুদ্ধি বের করল। তারা বাগানের মালীকে ডেকে পরিকল্পনা করল।
পরদিন সকালে মালী সবার আগে রাজপ্রাসাদে গেল। সে বলল “মহারাজ, শুনেছি আপনি এখন সবার স্বপ্ন পূরণ করছেন। তাই আমি খুব খুশি।”
রাজা বললেন, “তোমার স্বপ্ন কী ছিল?”
মালী বলল “আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি রাণীমাকে বিয়ে করেছি!”
রাজা রেগে উঠলেন “কি বলছ! তুমি একজন মালী, আর স্বপ্ন দেখেছো রাণীকে বিয়ে করেছো? এটা অসম্ভব! তোমার শাস্তি হবে!”
তখন মালী শান্তভাবে বলল “মহারাজ, আপনি তো বলেছিলেন আপনি সবার স্বপ্ন পূরণ করবেন। আমি শুধু আপনার আদেশই মানছি। একজন বৃদ্ধও তো স্বপ্নে ধনী লোকের মেয়েকে বিয়ে করেছিল, আর আপনি তাও পূরণ করতে চেয়েছিলেন!”
রাজা কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর বললেন “ঠিক আছে। আজ থেকে স্বপ্ন পূরণের আদেশ বন্ধ। তুমি রাণীকে বিয়ে করবে না। আর বৃদ্ধও ধনী লোকের মেয়েকে বিয়ে করবে না।”
রাজ্যে আবার শান্তি ফিরে এল।
‘প্রজাদের স্বপ্নপূরণ’ গল্পের নৈতিক শিক্ষা: সব স্বপ্ন পূরণ করা যায় না। বুদ্ধি ও বিবেচনা দিয়ে ঠিক-ভুল বোঝা খুবই দরকার।
আরও পড়ুন: 2টি সুন্দর মোটিভেশনাল গল্প যা আমাদের ভাল মানুষ হতে সাহায্য করবে
৩. স্বপ্নবিলাসী লোকটি : লাওস দেশের লোককথা

অনেক দিন আগের কথা। এক গ্রামে এক লোক একা থাকত। তার বিয়ে হয়নি, পরিবারও ছিল না। সে সারাদিন কেবল স্বপ্নে হারিয়ে থাকত।
ওই স্বপ্নবিলাসী মানুষটির সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ছিল—একটা সুন্দর মাটির হাঁড়ি। সে হাঁড়িটা খুব যত্ন করে বিছানার পাশে এক বাক্সে রেখে দিত।
প্রতিদিন সকাল ও রাতে সে হাঁড়ি বের করে আদর করে বলত, “তুমি আমার সবকিছু! তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই না!”
এই বলে সে হাঁড়ির দিকে তাকিয়ে স্বপ্নের জগতে চলে যেত।
একদিন সকালে সেই স্বপ্নবিলাসী হাঁড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবল “এটা যদি বিক্রি করি, তাহলে তো অনেক টাকা পাব!”
এই ভাবতেই সে আনন্দে চিৎকার করে উঠল— “আমি কোটিপতি হব!”
তারপর সে ভাবল “টাকার একভাগে নিজের খরচ চালাব। আরেকভাগে কিনব একটা গরু। গরুর যত্ন নেব। ও বাচ্চা দেবে। দশ বছরে অনেক গরু হবে!”
এরপর সে ভাবল “এত গরু একা সামলানো যাবে না। আমাকে বিয়ে করতে হবে। আমার স্ত্রী হবে সুন্দর ও ভালো। আমাদের একটি ছেলে হবে—মেধাবী, আজ্ঞাবহ।”
সে ভাবতে লাগল— “ছেলে বড় হচ্ছে। এবার সে স্কুলে যাবে। আমি ওর জন্য সুন্দর ব্যাগ, খাতা-কলম সব কিনেছি।”
“প্রতিদিন আমি ওকে স্কুলে নিয়ে যাই। একদিন সময় না থাকায় আমি ওকে একা পাঠাই।
ও বাড়ি ফেরার সময় দেখি একটা কুকুর ওর পেছনে দৌড়াচ্ছে! কুকুরটা ওকে কামড় দিল!
আমি রেগে গিয়ে চিৎকার করে বললাম ‘এই কুকুর! আমার ছেলেকে কামড়ালে?’
এই বলে আমি লাঠি তুলে ওকে মারলাম… এভাবে…!”
বলতে বলতে লোকটা বাস্তবে লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করল— “খটাস”
তার প্রিয় হাঁড়ি ভেঙে একেবারে গুঁড়ো হয়ে গেল!
সে চমকে উঠল। তাকিয়ে দেখল— না গরু আছে, না স্ত্রী, না ছেলে, না কুকুর…
শুধু ভাঙা হাঁড়ি পড়ে আছে সামনে।
স্বপ্নবিলাসী মানুষটি কাঁদতে কাঁদতে বলল— “সব শেষ! আমি সব হারিয়ে ফেললাম!”
‘স্বপ্নবিলাসী’ গল্পের নৈতিক শিক্ষা: শুধু স্বপ্ন দেখলে চলবে না—বাস্তব কাজ না করলে সব হারিয়ে যেতে পারে। অলস কল্পনায় সময় নষ্ট না করে নিজের জীবন নিজেই গড়তে হয়।
৪. ভিক্ষু আর রঙিন মুরগি ( Folklore of Laos )

অনেক দিন আগের কথা। তখন গ্রামের মানুষরা তাদের ছেলেদের পড়ালেখা শেখার জন্য মন্দিরে পাঠাতো। অনেক ছেলেই ছোট ভিক্ষু হতো এবং তারা মন্দিরের বড় ভিক্ষু বা অধ্যক্ষ ভিক্ষুর (অভিভাবক ভিক্ষু) সেবা করতো। সকাল সকাল তারা গ্রামের মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা সংগ্রহ করতে বড় ভিক্ষুর সঙ্গে যেত। কেউ কেউ মন্দিরের উঠোন ঝাঁট দিতো বা ভিক্ষুদের ঘর পরিষ্কার করতো।
একদিন বড় ভিক্ষু ভিক্ষা নিতে যাবার সময় দেখলেন, ছোট ভিক্ষু এখনো প্রস্তুত নয়। তিনি বললেন, “যদি তুমি আমার সঙ্গে না যাও, তবে মন্দিরের উঠোন খুব ভালো করে ঝাঁট দেবে। আর একটা কথা মনে রেখো, আমার কুটিরের চারপাশে যেন কোনো মুরগি না আসে। যদি মুরগির পায়খানা দেখি, তাহলে তা নিজেই চেটে পরিষ্কার করতে হবে!”
ছোট ভিক্ষু একটু বিরক্ত হলেও সম্মত হয়ে বলল, “আজ্ঞে ঠিক আছে।”
বড় ভিক্ষু চলে যাওয়ার পর, ছোট ভিক্ষু খুব মনোযোগ দিয়ে পুরো উঠোন এবং কুটির পরিষ্কার করল। কিন্তু তখন তার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এল। সে খেজুর গুড় জ্বালিয়ে খুব ঘন করে ফেলে কুটিরের আশেপাশে কয়েকটা ফোঁটা ফেলে রাখল। শুকিয়ে গেলে সেই গুড়ের ফোঁটাগুলো দেখতে মুরগির পায়খানার মতো লাগছিল।
বড় ভিক্ষু ফিরে এসে চারপাশে এইসব ফোঁটা দেখে রেগে আগুন। তিনি ডাক দিলেন, “এই ছোট ভিক্ষু! এখানে দেখ! কত মুরগির পায়খানা! বলেছিলাম না, থাকলে চেটে পরিষ্কার করবে?”
ছোট ভিক্ষু দৌড়ে এল। খুব মন খারাপ করে বলল, “ওই রঙচঙে মুরগিটাই আবার এসব করেছে। ঠিক আছে গুরুজি, আমি এখনই পরিষ্কার করছি।”
সে নিচু হয়ে একটা ফোঁটা চেটে দেখল এবং বলে উঠল,”আহা! কী মিষ্টি!”
সে একে একে সবগুলো চেটে খেতে লাগল আর বলল, “বাহ! দারুণ! এত মিষ্টি!”
বড় ভিক্ষু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। শেষ ফোঁটার দিকে ভিক্ষু বললেন, “থামো, ওইটা আমি খাব। দেখি সত্যিই মিষ্টি কিনা!”
ছোট ভিক্ষু হাসিমুখে অনুমতি দিল। ভিক্ষু নিচু হয়ে সেটাও চেটে খেলেন। “আহা! দারুণ মিষ্টি! কাল আবার সেই রঙচঙে মুরগিটাকে এনে দিও। যেন আবার এমন মিষ্টি পায়খানা করে।”
পরদিন ভিক্ষু যেমনটি বলেছিলেন, তেমনই করলেন। সকালে ভিক্ষা নিয়ে এসে বললেন, “আজ কিন্তু তুমি ছুঁবে না, খাবারের পর আমি নিজেই খেয়ে নেব।”
খাবার শেষে তিনি চেটে চেখে দেখলেন প্রথম ফোঁটা। মুখ ভেঙে গেল তার— “উফ! কী বাজে গন্ধ! এটা তো আগের দিনের মতো নয়!”
“ওহে গুরুজি,” বলল ছোট ভিক্ষু, “সম্ভবত এটা রঙচঙে মুরগির নয়, অন্য কোনো মুরগির!”
বড় ভিক্ষু একে একে সব ফোঁটা চেখে দেখলেন, তারপর বুঝলেন—তিনি একেবারে বোকা বনেছেন!
নীতিকথা: অতিরিক্ত কড়াকড়ি আর অহংকারের ফল কখনো ভালো হয় না। অন্যকে ছোট করে দেখালে, নিজের সম্মানই হারাতে হয়।
অথবা: বুদ্ধি খাটিয়ে কখনো কখনো ছোটরাও বড়দের ভুল বুঝিয়ে দিতে পারে।
৫. শিয়াংমিয়াং আর শামুকের দৌড় – লাওসের একটি লোককথা

একদিন শিয়াংমিয়াং তার গ্রামের পাশে এক জলাভূমির ধারে হাঁটছিল। হঠাৎ সে দেখে, একটা শামুক ধীরে ধীরে জলাভূমির কোল ধরে হেঁটে যাচ্ছে।
শিয়াংমিয়াং হাসতে হাসতে বলল, — “আহাহা! শামুক, তুমি তো কী ভয়ানক ধীরে হাঁটো! কোথায় যাচ্ছো ?”
শামুক বলল, — “আমি ঐ পাড়ে যাচ্ছি।”
শিয়াংমিয়াং আবার হেসে বলল, — “তাহলে তো ঐ পাড়ে পৌঁছাতে তোমার এক মাস লেগে যাবে!”
এ বলে সে জোরে হেসে উঠল। শামুকের একটু রাগ হল, তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে বলল, — “তুমি যদি নিজেকে এত দ্রুতগামী ভাবো, তাহলে চলো এক দৌড় প্রতিযোগিতা হোক!”
শিয়াংমিয়াং এত মজা পেল যে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। — “অবশ্যই! কখন করবো দৌড়? এখনই?”
শামুক গম্ভীরভাবে বলল, — “না না, এখন না। আমি চাই তুমি প্রস্তুতি নাও, শরীরটা গুছিয়ে নাও।”
শিয়াংমিয়াং একটু অবাক হয়ে বলল,
— “তাহলে কবে?”
— “আগামীকাল এই সময়, এখানেই।”
— “ঠিক আছে!”
তারপর শামুক দৌড় নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। সে গিয়ে তার অন্যান্য শামুক আত্মীয়দের সাহায্য চাইল। সবাই খুশি হয়ে রাজি হয়ে গেল—তাদের অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল শিয়াংমিয়াং একবার ঠকে যাক!
পরদিন শামুক এসে দৌড়ের জায়গায় হাজির। শিয়াংমিয়াং এলে শামুক বলল, — “আমি তো খুব ছোট। তুমি বুঝতে পারবে না আমি দৌড়ে কোথায় আছি। তুমি মাঝেমাঝে আমার নাম ডাকো—‘শামুক!’ আর আমি বলব—‘কুঁক!’ কেমন?”
শিয়াংমিয়াং রাজি হয়ে বলল,
— “ঠিক আছে, আগে একটু চর্চা করি।”
— “শামুক!”
— “কুঁক!”
তারপর শুরু হলো দৌড়। শিয়াংমিয়াং ছুটে চলল ঝড়ের মতো। কিছুদূর গিয়ে পিছনে তাকাল—শামুককে দেখা যায় না। সে ডাক দিল,
— “শামুক!”
— “কুঁক!”
উত্তর এল তার অনেক সামনে থেকে!
শিয়াংমিয়াং অবাক! — “এটা কী করে সম্ভব? আমি তো দৌড়ে এসেছি, ও তো আমাকে পেরিয়ে গেছে? না, আমাকে আরও জোরে দৌড়াতে হবে!”
সে আবার ছুটতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আবার ডাক দিল,
— “শামুক!”
— “কুঁক!”
আবারও উত্তর এল তার সামনে থেকে।
এবার শিয়াংমিয়াং একটু চিন্তিত হল, কিন্তু বলল, — “চিন্তা নেই, আমি ওকে ধরে ফেলবই।”
সে আরও দৌড়াল, হাঁপাতে লাগল, কিন্তু বারবার ডাক দিলে, উত্তর এল তার আগেই—
— “কুঁক!”
শেষে তার শরীর আর সইল না। সে দুর্বল গলায় বলল,
— “শামুক…”
— “কুঁক!”
ফিরে এল উত্তর, এখনও তার অনেক সামনে থেকে।
অজ্ঞান হওয়ার আগে শিয়াংমিয়াং ভাবছিল, “এত ধীরে চলা শামুক কীভাবে আমাকে হারাতে পারে?”
কিন্তু আমরা তো জানি, শামুক চতুর বুদ্ধি করেছিল। সে তার আত্মীয়-শামুকদের পুরো পথজুড়ে বসিয়ে রেখেছিল, যাতে শিয়াংমিয়াং যখনই ডাকে, সামনে থেকে উত্তর আসে। সব শামুক দেখতে এক রকম, ডাকও এক—“কুঁক!”
‘শিয়াংমিয়াং আর শামুকের দৌড়’ থেকে শিক্ষণীয় : এইভাবেই ধুরন্ধর শিয়াংমিয়াং এবার নিজের চালাকিতে হার মানল।