
থাইল্যান্ডের লোককথা বলতে আমরা আজ যা বুঝি, তা অনেক রকমের গল্প, পুরনো বিশ্বাস আর মুখে মুখে চলে আসা কথার ভাণ্ডার। বৌদ্ধ ধর্ম আসারও আগে থাইল্যান্ডে লোককথা ছিল। থাইরা বিশ্বাস করে যে ‘থান’ নামে এক আত্মা প্রথম সবকিছু তৈরি করেছিল। একে আকাশের আত্মা বলা হয়। তার আগে পৃথিবী ফাঁকা ছিল, কোনো মানুষ, গাছপালা বা পশু-পাখি কিছুই ছিল না। এমনকি সূর্য আর চাঁদও ছিল না। এই লোকবিশ্বাসগুলো এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রবাহিত হয়েছে। থাইল্যান্ডের লোককথায় এক পবিত্র দেবতা হল – গরুড়। তিনি এই মহাবিশ্বের পালনকর্তা। আজও থাইল্যান্ডে গরুড়ের ছবি তাদের জাতীয় প্রতীক।
থাইল্যান্ডের লোককথা : জনপ্রিয় 4 টির অনুবাদ মাত্র
থাইল্যান্ডের লোককথার একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন আত্মা আর ভূতের অস্তিত্ব। থাই লোককথার গুরুত্বের পেছনে এদের একটা বড় ভূমিকা আছে। হয়তো সারা বিশ্বে এটা খুব বেশি পরিচিত নয় বা তেমন আলোচনা হয় না, কিন্তু এর মিথের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য আজও রক্ষা করা হয়। আজ আমরা এখানে থাইল্যান্ডের 4 টি জনপ্রিয় লোককহিনীর বাংলা অনুবাদ নিচে প্রস্তুত করলাম, আশাকরি আপনাদের ভাল লাগবে।
1. লিলিত ফ্রা লো –

(‘লিলিত ফ্রা লো’ একটি মর্মান্তিক ত্রিভুজ প্রেমের গল্প)
অনেকদিন আগের কথা। থাইল্যান্ডের দুইটি রাজ্য ছিল — সোং এবং সুয়াং। এই দুই রাজ্যের মধ্যে ছিল শত্রুতা। একদিন সুয়াং রাজ্য সোং-এর উপর আক্রমণ করে। যুদ্ধে সোং-এর রাজা মারা যান, তবে শহরটি রক্ষা পায়। এরপর নতুন রাজা সিংহাসনে বসেন। তাঁর ছিল দুই কন্যা — ফুয়েন এবং ফ্যাং।
এদিকে সুয়াং-এর রাজা মারা যাওয়ার পর, তাঁর ছেলে ফ্রা লো রাজা হন। ফ্রা লো ছিলেন অতুলনীয় সুন্দর, তাঁর সৌন্দর্যের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
রাজকুমারীরা ফুয়েন ও ফ্যাং যখন ফ্রা লোর সৌন্দর্যের কথা শুনলেন, তখনই তাঁরা তাঁর প্রেমে পড়ে যান — যদিও তাঁকে একবারও দেখেননি। তাঁরা ঠিক করলেন, তাঁকে আকর্ষণ করার জন্য কিছু করা দরকার।
তাঁদের দুই সেবিকা — রুয়েন এবং রয়, কিছু ব্যবসায়ীদের সাহায্যে গান ছড়িয়ে দিলেন রাজ্য জুড়ে, যাতে ফ্রা লো সেই গান শুনে রাজকুমারীদের প্রেমে পড়ে যান।
তাঁরা এক পুরনো বাঘ আত্মার সাহায্যও চাইলেন, যে এক বিশেষ প্রেমের মন্ত্র ছুঁড়ে দিল ফ্রা লোর উপর। যদিও ফ্রা লোর মা সেই মন্ত্র ভাঙার চেষ্টা করেন, তবুও ফ্রা লো রাজকুমারীদের প্রেমে পড়ে যান এবং তাঁদের সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হন।
পথে যেতে যেতে তাঁর মনে পড়তে থাকে — পেছনে রেখে আসা তাঁর রাজরানী, উপপত্নী ও মা; আর সামনে অপেক্ষা করা দুই রাজকুমারী। তিনি বিভ্রান্ত হন, কিন্তু প্রেমের টানে এগিয়ে চলেন।
শেষে এক রাজকীয় উদ্যানে, এক প্যাভিলিয়নের মধ্যে, ফ্রা লোর সঙ্গে ফুয়েন ও ফ্যাং-এর দেখা হয়। তাঁরা একে অপরকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
কিন্তু, সোং-এর প্রাক্তন রানি, যিনি নিজের স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চাইছিলেন, গোপনে একদল গুপ্তঘাতক পাঠালেন।
এক রাতের আক্রমণে, বিষাক্ত তীরের আঘাতে ফ্রা লো ও দুই রাজকুমারী নিহত হন। তাঁদের তিনজনকেই একসঙ্গে দাহ করা হয়। দুই রাজ্যে তাঁদের স্মরণে স্তূপ তৈরি করা হয়।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর দুই রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা শেষ হয় এবং মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: মালয়েশিয়ার লোককাহিনী- 5 টি জনপ্রিয় মালয় লোককথা পড়ুন
2. নাং সিপ সঙ – বারো বোনের গল্প

(‘বারো বোনের গল্প’ একটি থাই লোককথা থেকে নেওয়া)
অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক ব্যবসায়ী ও তার স্ত্রী খুব করে চাইছিলেন যেন তাঁদের সন্তান হয়। একদিন দেবতার উদ্দেশ্যে মন্দিরে বারোটি কাঁচকলার থোড় সহ প্রার্থনা করলেন।
দেবতা তাঁদের কথা শুনলেন।
কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রী গর্ভবতী হলেন। ব্যবসায়ী একটি পুত্রসন্তান আশা করেছিলেন, কিন্তু হল একটি কন্যাসন্তান।
এরপর একে একে তাঁর স্ত্রীর গর্ভে আরও সন্তান এল। এইভাবে তাঁদের মোট বারোটি কন্যা সন্তান হল!
এদিকে ব্যবসায়ীর ভাগ্যও বিশেষ ভালো যাচ্ছিল না।
তার জাহাজে করে যে মাল বিদেশে পাঠানো হতো, সেগুলো সব ডাকাতেরা লুটে নিচ্ছিল।
সে বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েও কোনো লাভ করতে পারছিল না।
এতগুলো মুখে খাবার জোগানো কঠিন হয়ে উঠল।
তখন এক দুঃখজনক সিদ্ধান্ত নিল ব্যবসায়ী — সে চুপিচুপি তার বারোটি মেয়েকে জঙ্গলে রেখে আসার পরিকল্পনা করল, স্ত্রীকে কিছু না জানিয়ে।
প্রথমবার যখন সে তাদের জঙ্গলে নিয়ে গেল,
তখন সবচেয়ে ছোট মেয়ে রাস্তায় চিহ্ন রেখে এসেছিল, ফলে তারা ফেরত আসতে পেরেছিল।
কিন্তু দ্বিতীয়বার, আর রক্ষা পেল না।
জঙ্গলের অনেক ভেতরে ঢুকে তারা হাঁটতে লাগল।
তাদের হাতে ছিল বারোটি প্যাকেট — মনে করেছিলো হয়তো খাবার আছে, কিন্তু খুলে দেখল একটিতে চাল, আর বাকি এগারোটিতে শুধু বালি!
এভাবে হাঁটতে হাঁটতে তারা পৌঁছে গেল এক অদ্ভুত রাজ্যে — দানবরাজ্য ‘যক্ষপুরী’তে।
সেখানে বাস করত এক দানবী, নাম সানত্রা।
সানত্রা এক জাদু দিয়ে নিজেকে সুন্দরী রাণী রূপে রূপান্তর করল এবং বারো বোনকে নিজের দত্তক কন্যা হিসেবে গ্রহণ করল।
অনেক বছর তারা সেই রাণীর কাছেই ছিল। সানত্রার দেখাশোনায় তারা বড় হল, সুন্দরী যুবতীতে পরিণত হল।
কিন্তু একদিন, সানত্রা যখন শিকারে গিয়েছিল, তারা এক বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে জানতে পারল যে সানত্রা আসলে একজন রাক্ষসী এবং সে যুবতীদের খেয়ে ফেলে।
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তারা পালিয়ে গেল সেই যক্ষপুরী থেকে।
পথে হাঁটতে হাঁটতে তারা এক ঝকঝকে নদীর ধারে পৌঁছাল,
সেখানে তারা একটু স্নান করতে নামল।
ঠিক তখনই, এক রাজা স্নানরত বারোটি বোনকে দেখতে পেলেন ।
তাদের দেখে এতই মুগ্ধ হয়ে গেলেন, যে তিনি সবাইকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে এলেন এবং তাদের বারো জনকেই বিয়ে করলেন।
অন্যদিকে, যক্ষপুরীতে ফিরেই সানত্রা জানতে পারল তারা পালিয়ে গেছে। সে প্রচণ্ড রেগে গেল এবং প্রতিশোধ নেবার পরিকল্পনা করল।
সে আবার রূপ পাল্টে অদ্ভুত রূপবতী নারী রূপে সেই রাজাকে দেখা করতে গেল।
রাজা তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকেও বিয়ে করলেন এবং তাঁকে করলেন প্রথম রাণী।
এবার শুরু হল সানত্রার প্রতিশোধ।
সে রাজাকে বলল,
– “আমার এই অসুখের কারণ হচ্ছে তোমার অন্য বারো স্ত্রী। তাদের চোখের জল থেকে তৈরি ওষুধ না পেলে আমি মরেই যাব।”
রাজা বিশ্বাস করলেন।
তার আদেশে ১১ বোনের দুই চোখ উপড়ে ফেলা হলো, আর ছোটো বোনের একটি চোখ।
তারপর সবাইকে ফেলে দেওয়া হলো এক অন্ধকার গুহায়। খাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।
ততদিনে বারো বোন সবাই সন্তান-সম্ভবা ছিল।
দুঃখের কথা, সন্তান জন্মানোর পর অনাহারে-অর্ধাহারে তারা নিজের সন্তানদের খেয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল।
শুধু সর্বকনিষ্ঠ বোনটি তার ছেলেকে লুকিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিল।
সে অন্য বোনদের বলেছিল – “আমার সন্তান জন্মেই মারা গেছে।”
সে চুপিচুপি নিজের ছেলেকে লালন-পালন করল। ছেলের নাম রাখল রোথাসেন।
রোথাসেন বড় হয়ে গুহার এক গোপন পথ খুঁজে পেল। সে এক জাদুকাঠি পেয়ে গেল, যেটা দিয়ে দানবী সানত্রাকে পরাজিত করা যেত।
সে সাহস করে বেরিয়ে পড়ল, সানত্রার সঙ্গে যুদ্ধ করল — এবং শেষ পর্যন্ত সানত্রাকে হারিয়ে দিল।
এইভাবেই সে নিজের মা আর মাসিদের সেই অন্ধকার গুহা থেকে উদ্ধার করল।
নীতিশিক্ষা: সত্য আর সাহস যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন, শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। আর প্রতিশোধ নয়, ক্ষমাই সবচেয়ে বড় শক্তি।
আরও পড়ুন: কাম্বোডিয়ার লোককথা – জানুন সমৃদ্ধ সংস্কৃতির আশ্চর্য এই দেশ
3. সোনালি বোয়াল মাছ

(‘সোনালি বোয়াল মাছ’ একটি দুঃখের কিন্তু ন্যায়ের জয়গাথা)
এক দেশে এক ধনী বণিক ছিল। তাঁর ছিল দুই স্ত্রী। দুই স্ত্রীর স্বভাব ছিল একদম বিপরীত।
দুই স্ত্রীই এক সময় একটি করে কন্যা সন্তানের জন্ম দিলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, দুই মেয়ের চেহারায় ছিল আশ্চর্য মিল।
তবে, চিনতে ভুল হতো না।
- এক মেয়ের নাম ছিল আউয়াই — সে ছিল মায়ের মতো দয়ালু, নম্র আর সবার পাশে দাঁড়ানো এক কোমল হৃদয়ের মেয়ে।
- আরেক মেয়ের নাম আই — সে ছিল ঈর্ষাকাতর, রাগী আর কু-চরিত্রের।
আই আর তার মা আউয়াইকে সহ্য করতে পারত না। তারা একজোট হয়ে আউয়াই ও তার মাকে কষ্ট দেওয়ার নানান ফন্দি আঁটতে লাগল।
একসময় তারা এক খুনি ভাড়া করে আউয়াইয়ের মাকে হত্যা করায়। তারা ভাবল কাজ শেষ, কিন্তু গল্প তখনই নতুন মোড় নিল।
আউয়াইয়ের মা তার সৎ জীবনের কারণে সোনালি বোয়াল মাছ রূপে পুনর্জন্ম নিলেন। তিনি নদীতে থাকতেন, কিন্তু নিয়ম করে দেখা করতে আসতেন আউয়াইয়ের সঙ্গে, মায়ের মমতায় ভরে দিতেন মেয়ের মন।
কিন্তু দুষ্টরা কি সহজে হারে?
আই আর তার মা যখন বুঝল সোনালি বোয়াল মাছ আসলে আউয়াইয়ের মা, তখন তারা মাছটিকে ধরে রান্না করে সবাইকে খাওয়াল। দুঃখের ব্যাপার, আউয়াইকেও বাধ্য করা হলো সেই খাবার খেতে — সে বুঝতেও পারেনি, সে নিজের মাকে খাচ্ছে!
এরপর একদিন এক রাজপুত্র এল। সে আউয়াইয়ের সৌন্দর্য আর ভালো মন দেখে প্রেমে পড়ে গেল। আউয়াইয়ের জীবনে আবার সুখের আলো ফুটতে শুরু করল।
কিন্তু ঈর্ষাকাতর আই সেটা কিছুতেই সহ্য করতে পারল না। সে একটা ফাঁদ পাতল — বলল, তাদের বাবা খুব অসুস্থ। আউয়াই যখন বাবাকে দেখতে গেল, তখন তাকে ফাঁদে ফেলে গরম তেলে ফেলে দিল!
আই এরপর আউয়াইয়ের পরিচয় নিয়ে রাজপুত্রের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করল।
তবে সত্য বেশি দিন চাপা থাকে না।
আইয়ের মিথ্যে এক সময় প্রকাশ পেল। তার অপরাধের শাস্তি হিসেবে তাকে কঠোর সাজা দেওয়া হলো।
অন্যদিকে, আউয়াইকে এক জাদুকর জীবিত করে তোলে। রাজপুত্র তাকে ফিরে পায় এবং তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।
নীতিশিক্ষা: সত্য আর ভালোবাসা কখনও মরে না। অন্যায় যতই শক্তিশালী হোক, একদিন তা ধ্বংস হবেই।
4. সানো নোই রুয়েন ঙ্গাম

(‘সানো নোই রুয়েন’ যে রাজকুমারী একটি ঘর নিয়ে জন্মেছিল)
অনেক অনেক দিন আগে, রোম বিশাই নামে এক ছোট্ট সুন্দর রাজ্যে বাস করতেন এক সদয় রাজা ও রানি।
তাঁদের একটি সুন্দর মেয়ে জন্মায়, যার নাম রাখা হয় সানো নোই।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সানো নোই জন্মের সময়ই হাতে ধরে রেখেছিল একটি ছোট, থাই-ধাঁচের কাঠের ঘর!
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছো — জন্মের সময়ই ঘর হাতে ছিল তার।
তবুও, রাজা-রানি তাতে কিছু মনে করলেন না। তাঁরা ভালোবাসায় ভরিয়ে বড় করতে লাগলেন সানো নোই-কে।
সানো নোই সেই ছোট কাঠের ঘরটা খুব ভালোবাসত।
সে ঘরের দেয়াল আর দরজায় আঙুল বুলিয়ে স্বপ্ন দেখত — একদিন সে ঠিক এই ঘরের ভেতরেই বাস করবে।
একদিন সে এমন গভীরভাবে স্বপ্নে ডুবে গিয়েছিল যে,
চোখ খুলে দেখল ঘরটা বড় হয়ে গেছে!
এই প্রথমবার – সে ঘরের ভিতরের অংশ দেখতে পেল —
কিন্তু চোখ আবার বন্ধ করে খুলতেই — ঘরটা আবার আগের মতো ছোট হয়ে গেল ।
এর কিছুদিন পর, রাজ দরবারের জ্যোতিষী এক অদ্ভুত ভবিষ্যদ্বাণী করল।
সে বলল — সানো নোই-এর ভাগ্যে বিপদ আসছে। তাকে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হবে একাকী এক যাত্রায়, না হলে সে বিপদে পড়বে।
রাজা-রানির মন ভেঙে গেল, তবুও মেয়ের মঙ্গলের জন্য তাঁরা সানো নোই-কে বিদায় দিলেন।
তাঁরা বললেন,
– “তুমি কারও কাছে নিজের পরিচয় দেবে না।”
– “তোমার কাঠের ঘরটাও সঙ্গে নিতে পারবে না।”
সানো নোই চোখে জল নিয়ে প্রাসাদ ছাড়ল।
পথে যেতে যেতে সে এক মেয়ের প্রাণ বাঁচাল।
মেয়েটির নাম ছিল কুলা।
কুলা কৃতজ্ঞ হয়ে বলল – “তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছো, আমি তোমার সেবিকা হতে চাই। আমার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।”
সানো নোই রাজি হয়ে গেল। তারা একসঙ্গে পথ চলতে লাগল।
একদিন তারা পৌঁছাল এক নতুন দেশে — নোপে পারাত।
সেখানে শুনল, রাজপুত্র ভিচিত চিন্ডা সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
সানো নোই সিদ্ধান্ত নিল তাকে বাঁচাবে।
সে রাজকীয় পোশাক পরে গেল প্রাসাদে। জানাল যে, সে একজন রাজ-চিকিৎসক।
আরও বলল:
– “রাজপুত্রকে বাঁচাতে হবে, কিন্তু আমাকে পর্দা টানিয়ে দিতে হবে যেন কেউ না দেখে।”
– “আর একটি স্নানের টব চাই আমার জন্য।”
সেই মত ব্যবস্থা হলো।
সানো নোই এক গোপন ওষুধ বের করে রাজপুত্রের ক্ষত স্থানে ঢালল।
বিষ যেন আগুনে জ্বলে উঠল — বাষ্প হয়ে উঠল চারপাশে।
সেই বাষ্পে সানো নোই ঘেমে উঠল, কাশতে লাগল।
সে নিজের পোশাক খুলে দ্রুত স্নান করতে গেল বিষ ধুয়ে ফেলতে।
কিন্তু ঠিক সেই সময়েই, কুলা সব কিছু দেখে ফেলেছিল।
সে চুপিচুপি সানো নোই-এর কাপড় চুরি করল,
আর রাজপুত্রের সামনে নিজেকে উদ্ধারকারী রাজকন্যা বলে পরিচয় দিল।
রাজপুত্র যখন জ্ঞান ফিরে পেল, সামনে কুলাকে দেখে বিশ্বাস করল — ও-ই তাকে বাঁচিয়েছে।
সানো নোই যখন ফিরে এল, দেখল তার পোশাক পরে কুলা দাঁড়িয়ে।
সে সত্যি বলার চেষ্টা করল, কিন্তু কুলা বলল – “ও আমার সেবিকা। ওর কথা বিশ্বাস করো না।”
সেই থেকে শুরু হল সানো নোই-এর কুলার সেবিকা হয়ে থাকা।
কিন্তু ধীরে ধীরে রাজপুত্র বুঝে গেল কিছু একটা ঠিক নয়।
কুলার আচরণ ছিল একেবারেই রাজকন্যার মতো নয়। আর সানো নোই, সে ছিল বিনয়ী, শান্ত, আর মিষ্টি।
এক অভিযানে বেরিয়ে রাজপুত্র সত্য জানতে পারল — সানো নোই-ই প্রকৃত রাজকন্যা!
সে ফিরিয়ে আনল সানো নোই-এর কাঠের ঘরও।
রাজপুত্র কুলাকে রাজ্য থেকে বের করে দিতে চাইল।
কিন্তু সানো নোই বলল – “না, কুলাকেও নিজের ভুল বুঝে নতুন পথে চলার সুযোগ দেওয়া উচিত।”
এভাবেই শেষ হল সানো নোই-এর যাত্রা।
নীতিশিক্ষা: সত্য ও সাহস একদিন প্রকাশ পায়ই। আর ক্ষমা — সেটাই সবচেয়ে বড় শক্তি।