বাংলা শিখি বাংলা লিখি [পর্ব: ৬]

বাংলা শিখি বাংলা লিখি

হ্রস্ব ‘ই’-কার ও দীর্ঘ ‘ঈ’-কারের বানান রীতি

১) তৎসম শব্দের ( অর্থাৎ যে সমস্ত শব্দ সংস্কৃত থেকে অবিকৃত ভাবে বাংলা ভাষার গৃহীত হয়েছে ) হ্রস্ব ‘ই’-কার ও দীর্ঘ ‘ঈ’-কার অপরিবর্তিত থাকবে।

# তবে যে সমস্ত তৎসম শব্দে হ্রস্ব ‘ই’-কার ও দীর্ঘ ‘ঈ’-কার উভয়ই প্রচলিত সেখানে হ্রস্ব বিকল্পটি গ্রহণ করাই যুক্তিযুক্ত। যেমন— অঙ্গুলি, অঙ্গুরি, চিৎকার, ত্রুটি, ধরণি, শ্রেণি, সরণি, সারণি, বেণি, বেদি, পদবি, সূচি, নাড়ি, পল্লি, পঞ্জি ইত্যাদি।

২) তদ্ভব শব্দে ( অর্থাৎ যে সমস্ত শব্দ সংস্কৃত থেকে ধারাবাহিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে ) দীর্ঘ ‘ঈ’-কার পরিহার করে হ্রস্ব ‘ই’-কার ব্যবহার করতে হবে। যেমন— পক্ষী>পাখি, হস্তী>হাতি, সখী>সই ইত্যাদি। আরো উদাহরণ— কাহিনি, বহিন(বোন), ঘি, মিঠা ইত্যাদি।

৩) বাংলা শব্দভাণ্ডারে গৃহীত বিদেশি শব্দে প্রায় সর্বত্রই দীর্ঘ ‘ঈ’-কারের পরিবর্তে হ্রস্ব ‘ই’-কার হবে। যেমন—

আরবি : গরিব, দলিল, দাখিল, দাবি, নজির, ইমান, ইদ, উকিল, খাতির, তারিখ, জিলা, মুহুরি ইত্যাদি।

# বাংলা একাডেমি ঢাকা ব্যতিক্রম হিসেবে ‘ঈদ’ রাখার পক্ষপাতী।

ফারসি : উকিল, উজির, খরিদ, খাকি, জমি, চাকরি, দাবি, নালিশ, হিসাব, শহিদ, বাগিচা, বরফি, নিমকি, বন্দি, বেশি(>বেশ), তৈরি(>তইয়ার্) ইত্যাদি।

ইংরেজি : টেবিল, সিনেমা, কোম্পানি, কমিটি, মিনিট, টিকিট, টিন, টিম, লিগ, লিড, লেডি, রিড, সিড, স্টিল, স্ট্রিট, ফ্রি, রেফারি, সেক্রেটারি, নার্সারি, জানুয়ারি ইত্যাদি।

৪) বিদেশি বা অ-তৎসম শব্দে সংস্কৃত -ঈয় প্রত্যয় যুক্ত হলে দীর্ঘ ‘ঈ’-কার বজায় থাকবে। যেমন— এশীয়, ইউরোপীয়, অস্ট্রেলীয়, ইতালীয় ইত্যাদি।

৫) অ-তৎসম শব্দে স্ত্রীলিঙ্গ বোঝানোর ক্ষেত্রে হ্রস্ ‘ই’-কার ব্যবহার হবে। যেমন— কাকি, খুকি, চাকরানি, চাচি, ছুঁড়ি, ঠাকুরানি, পাগলি, পিসি, বেটি, মামি, রানি ইত্যাদি।

৬) জীবিকা ও ভাষা সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও ই-কারান্ত প্রত্যয়ে হ্রস্ব ‘ই’-কার হবে। যেমন— ওকালতি, জমিদারি, ডাকাতি, ডাক্তারি, নবাবি, মাতব্বরি, মাস্টারি ইত্যাদি অথবা আরবি, ফারসি, ফরাসি, মারাঠি, ইরাকি, জাপানি, পশ্চিমি, বাঙালি, বাংলাদেশি, বিহারি ইত্যাদি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top