ক্ষুদ্রের গৌরব

কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

( তাঁর জীবদ্দশায় অপ্রকাশিত একটি রচনা )

সে রাত্রে চাঁদের বড় বাহার ছিল। শুভ্র, স্নিগ্ধ, শান্ত কৌমুদী স্তরে স্তরে দিগ্‌দিগন্তে ছড়াইয়া পড়িতেছিল। আকাশ বড় নির্মল, বড় নীল, বড় শোভাময়। শুধু সুদূর প্রান্তস্থিত দুই-একটা খণ্ড শুভ্র মেঘ মধ্যে মধ্যে দেখা যাইতেছে। সেগুলা বড় লঘু-হৃদয়।কাছে আসিয়া, আসেপাশে ছুটিয়া বেড়াইয়া চাঁদকে চঞ্চল করিয়া দেয়। আজ তাহা পারে নাই, তাই চন্দ্রমা কিছু গম্ভীর-প্রকৃতি। সে স্থির গাম্ভীর্যের যে কি সৌন্দর্য তাহা আমি বর্ণনা করিতে পারিব না।

আকাশে স্থান গ্রহণ করিলেই তাঁহার এ শোভা হয় না। তবে মনে হয় যেদিন কবি তাঁহার রূপ দেখিয়া প্রথম আত্মবিস্মৃত হইয়াছিল, আজ বুঝি তাঁহার সেই রূপ! যে রূপ দেখিয়া বিরহী তাঁহার পানে চাহিয়া প্রিয়তমের জন্য প্রথম অশ্রুমোচন করিয়াছিলেন, আজ বুঝি তিনি সেই রূপে গগনপটে উদিত হইয়াছিলেন; আর যে রূপের মোহে ভ্রান্ত চকোরী সুধার আশায় প্রথম পথে ছুটিয়া গিয়াছিলআজ বুঝি তিনি সেই সুধাকার! নির্নিমেষ-নয়নে চাহিয়া চাহিয়া সত্যই মনে হয়, কি শান্ত, কি স্নিগ্ধ, কি শুভ্র! শুভ্র জ্যোৎস্না উন্মুক্ত বাতায়নপথে সদানন্দের ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করিয়াছে। গৃহে দীপ নাই। শুধু সদানন্দ নীচে বসিয়া গাঁজার কলিকায় দম দিতেছে, রোহিণীকুমার মুখপানে চাহিয়া আছে। আর অদূরে কে একজন গাহিয়া চলিতেছে, “যমুনা-পুলিনে কাঁদে রাধা বিনোদিনী”। সদানন্দ ধীরে ধীরে গাঁজার কলিকা নামাইয়া রাখিয়া ধীরে ধীরে মাথা নাড়িয়া বলিল, “আহা”!

তাহার পর চক্ষু জলে ভরিয়া উঠিল। আর একবার সে মাথা নাড়িয়া, মনে মনে সেই অসম্পূর্ণ পদটি আবৃত্তি করিয়া লইল—“কাঁদে রাধা বিনোদিনী”।

কবে কোন্‌ স্নেহরাজ্যে বিরহ-ব্যথায় রাধা বিনোদিনী যমুনা-পুলিনে বসিয়া প্রিয়তমের জন্য অশ্রুমোচন করিয়াছিলেন সে-কথা ভাবিয়া আজ সদানন্দের চক্ষে জল আসিয়াছে। সে গাঁজা খাইতেছেকাঁদিতে বসে নাই। শুধু একটা গ্রাম্য, অতি ক্ষুদ্র, অসম্পূর্ণ পদ অসময়ে তাহার চক্ষে জল টানিয়া আনিয়াছে।

সদানন্দের মুখে ঈষৎ চাঁদের আলো পড়িয়াছিল। সে আলোকে রোহিণীকুমার সদানন্দের চক্ষের জল দেখিতে পাইল। একটু সরিয়া বসিয়া বলিল, “সদা তোর নেশা হয়েছে, কাঁদছিস কেন?”

সদানন্দ গাঁজার কলিকা জানালা দিয়া ছুঁড়িয়া ফেলিয়া দিল। এবার রোহিণী বিরক্ত হইল। দাঁড়াইয়া উঠিয়া কহিল, “ঐ ত তোর দোষ—মাঝে মাঝে বেঠিক হয়ে পড়িস–”
— সদানন্দ কথা কহিল না দেখিয়া বিরক্ত অন্তঃকরণে রোহিণী নিজেই কলিকার অন্বেষণে বাহিরে আসিল।

আর একবার জানালা দিয়া দেখিল -সদানন্দ পূর্বের মত মুখ নিচু করিয়া বসিয়া আছে। তাহার এ ভাব রোহিণীর নিকট নূতন নহে –সে বিলক্ষণ বুঝিয়াছিল আজ অন্য আশা নাই। তাই গম্ভীরভাবে কহিল – “সদা– শুগে যা- কাল সকালে আবার আসব।”

রোহিণী একটু বিরক্ত হইয়া চলিয়া যাইতেছিল — কিন্তু পথে আসিয়াই তাহার মনে পড়িল—সেই কোমল করুণ “আহা-” –তখন সে হাততালি দিয়া গান ধরিল –“যমুনা -পুলিনে বসে কাঁদে রাধা বিনোদিনী – বিনে সেই– বিনে সেই—”

কিছুক্ষণ বিরামের পর আবার সেই গান সদানন্দের কর্ণে প্রবেশ করিবামাত্র সে যুক্তকরে ঊর্ধ্বনেত্রে কাঁদিয়া কহিল— “দয়াময় তুমি ফিরিয়া এস।”

রাধার দুঃখ সে হৃদয়ে অনুভব করিয়াছে, তাই কাঁদিয়াছে; ক্ষুদ্র কবিতার ক্ষুদ্র একটি চরণ তাহার সমস্ত হৃদয় মন্থন করিয়া তুলিয়া ধরিয়াছে। সেই নির্মল নীল যমুনা; সেই পিককুহরিত জ্যোংস্নাপ্লাবিত সখী-পরিবৃত কুঞ্জবন, সেই বকুল, তমাল, কদম্বমূল; সেই মৃতসঞ্জীবনী বংশী-স্বর; মান অভিমান মিলন, তাহার পর শতবর্ষব্যাপী সেই সর্বগ্রাসী বিরহ! আর ছায়ার মত সেই ভ্রাতৃপ্রেম মাতৃপ্রেম—দয়া, ধর্ম, পুণ্য—এবং তাহার সর্বনিয়ন্তা পূর্ণব্রহ্ম শ্রীকৃষ্ণ!

এত কথা, এই দীপ্ত অথচ স্নিগ্ধভাব, এত মাধুরী প্রণোদিত করিবার গৌরব কি এই অসম্পূর্ণ নিতান্ত সাধারণ পদটির? রচয়িতার, না গায়কের? কিন্তু পদটি যদি “যমুনা-পুলিনে বসে কাঁদে রাধা বিনোদিনী” না হইয়া – “কাঁদে শরৎ-শশী” হইত–তাহা হইলে সদানন্দের চক্ষে এত শীঘ্র এমনি করিয়া জল আসিত কি না তাহাতে বিলক্ষণ সন্দেহ। সে হয়ত বিরহ বেদনাটা ছাড়িয়া দিয়া প্রথম শরৎ-শশীর বাস্তব নির্ণয় করিতে বসিত। শরৎশশী রাধার বিশেষণ হইতে পারে কি না তাহা বেশ করিয়া আলোচনা করিয়া পরে অশ্রুজল সম্বন্ধে মীমাংসা করিত। কিন্তু গায়ক যদি গায়িতেন “ঘরের কোণেতে বসে কাঁদে শরৎ-শশী” তাহা হইলে অনুমান হয় করুণ রসের পরিবর্তে হাস্যরসেরই উদ্রেক হইত। যেন ঘরের কোণেতে বসিয়া ক্রন্দনটা ক্রন্দন নামের যোগ্য হইতে পারে নাকিংবা শরৎশশীর বিরহ হইতে নাইঅথবা হইলেও কান্নাকাটি করা তাহার পক্ষে উপযুক্ত হয় নাই। তাহা হইলে দেখা গেল যেবিরহবেদনাজনিত দুঃখই সদানন্দের অশ্রু জলের পূর্ণ হেতু নহে। তাহা যদি হইততাহা হইলে শরৎশশীর দুঃখে তাহাকে অশ্রুজল লইয়া এরূপ মারামারি করিতে হইত না।

কিন্তু রাধারই জন্য এত মাথাব্যথা কেনএকটু কারণ আছেতাহা ক্রমে বলিতেছি।
উত্তুঙ্গ হিমালয়শিখরের ধবল নগ্ন শোভা কেবল চক্ষুষ্মান অনুভব করিতে পারে—অন্ধে পারে না। অন্ধের নিকট হিমাচল শরীর সঙ্কুচিতও করে নাসম্পদশোভাও আবৃত্ত রাখে না। তথাপি অন্ধ সে সৌন্দর্য উপলব্ধি করিতে সক্ষম হয় না। এ অক্ষমতার কারণ তাহার চক্ষুহীনতা। যে তাহাকে বুঝাইয়া দিবে হিমালয়শিখর কি উচ্চকি মহান্‌কি গম্ভীরকি সৌন্দর্যে সুশোভিতসে তাহার নাই। তাহার পর যেকেহ পর্বতের শোভা হৃদয়ে একবার অনুভব করিয়াছে সেই কেবল দুইচারিখানা শিলাখণ্ডের কৃত্রিম সন্নিবেশ দেখিয়া আনন্দউপলব্ধি করিতে পারে। যে কখন দেখে নাই সে পারে না। যে দেখিয়াছে তাহাকে এই দুই-চারিটি শিলাখণ্ডই স্মৃতি-মন্দিরের রাজদ্বার উন্মোচিত করিয়া পূর্বদৃষ্ট পর্বতের সন্নিকটে টানিয়া লইয়া যাইতে পারে, অতীত জীবনের কথা স্মরণ করাইয়া দিতে পারে। এই সক্ষমতাই ক্ষুদ্র শিলাখণ্ডের গৌরব। সে যে শ্লাঘ্যের ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি, মহত্ত্বের ক্ষুদ্র প্রতিবিম্ব, প্রতিবিম্বের ইহাই শ্লাঘা—ছায়ার ইহাই মহত্ত্ব।

ভক্তের নিকট বৃন্দাবনের একবিন্দু বালুকণাও সমাদরে মস্তকে স্থান পায়, সে কি বালুকণার বস্তুগত গুণ, না বৃন্দাবনের মাহাত্ম্য? তাহারা মহতের স্মৃতি লইয়া, ভক্ত বাঞ্ছিতের ছায়াস্বরূপিণী হইয়া মর্মে উপস্থিত হয়, তাই তাহাদের এত সম্মান, এত পূজা।

সন্তানহারা জননীর নিকট তাহার মৃতশিশুর পরিত্যক্ত হস্তপদহীন একটা মৃৎ-পুত্তলিকার হয়ত বক্ষে স্থানপ্রাপ্তি ঘটে। কেন যে তুচ্ছ মৃৎপিণ্ডের এতটা গৌরব, সে কথা কি আর বুঝাইয়া দিতে হইবে? বক্ষে স্থান দিবার সময় জননী মনে করেন না যে, ইহা একটা তুচ্ছ মাটির ঢেলা। তাঁহার নিকট সে তাঁহার মৃতপুত্রের ছায়া। যদি কখন পুত্তলিকার কথা মনে হয়—সে মুহূর্তের জন্য। তাহার পর সমস্ত প্রাণমন, গত জীবন, পুত্রের স্মৃতিতে ভরিয়া উঠে। তুচ্ছ মৃৎপিণ্ডের ইহার অধিক আর কি উচ্চাশা থাকিতে পারে? সে একটি হৃদয়েও সুখ দিয়াছে ইহাই তাহার শ্লাঘা।

আর রাধার বিরহ-ব্যথায় সদানন্দের অশ্রুজল! যমুনাতীরে বসিয়া যখন বিরহবিধুরা শ্রীরাধা মর্মান্তিক যন্ত্রণায় হৃদয়ের প্রতি শিরা সঙ্কুচিত করিয়া তপ্ত অশ্রুজল বিসর্জন করিতেছিলেন, তাঁহার কি মনে হইয়াছিল কবে কোন্‌ ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে বসিয়া, তাঁহার দুঃখে সমদুঃখী হইয়া সদানন্দ চক্ষুজল বিসর্জন করিবে? যিনি ধ্যেয়, যিনি নিত্য উপাসিত, তাঁহারই ছায়া শ্রীরাধার হৃদয়মন অধিকার করিয়া রাখিয়াছিল।

অন্যের তাহাতে স্থান হয় না, তাহাই সদানন্দের অশ্রুজলের কারণ, আকর, মূল,—কিন্তু সোপান বা পথ নহে। অগাধ সমুদ্র ঝঞ্ঝাবাতের সহিত যুদ্ধ করে, কিন্তু ঘোষণা করিয়া বেড়ায় না! শুধু ক্ষুদ্র তরঙ্গের দল তটপ্রান্তে আসিয়া ঘাতপ্রতিঘাতে পৃথিবীর বক্ষঃস্থল পর্যন্ত কম্পিত করিয়া বলিয়া যায়—“দেখ আমাদের কত প্রতাপ!” কূপের জল তাহা পারে না। সাগর-ঊর্মির ইহাই গর্ব যে সে অগাধ শক্তিশালী সমুদ্রের আশ্রিত। সূর্যের তেজ জননী বসুমতী প্রতিফলিত করেন, তাই তাঁহার রুদ্র প্রতাপ বুঝিতে পারি। আর সেই অনন্ত জ্যোতির্ময়ী বিশ্বপ্লাবনী রাধাপ্রেমের কথা বৃন্দা, ললিতা, বিশাখা, প্রভৃতি সখিবৃন্দ ব্যতীত আর কেহ জানিত না। যাহারা জানিতে পারিয়াছিল তাহারা মহৎ হইয়াছিল, যাহারা শুনিয়াছিল তাহারা ধন্য হইয়াছিল। তার পর কালক্রমে লোকে হয়ত সে কথা ভুলিয়া যাইত। একেবারে না ভুলিলেও তাহাতে এমন জীবন্ত মোহিনীশক্তি থাকিত না। এ মাধুরী যাঁহারা ধরিয়া রাখিয়াছেন, এ মহত্ত্ব, নশ্বর জগতের এ-সার বস্তু যাঁহারা পৃথিবীর ন্যায় প্রতিফলিত করিয়া জনসাধারণকে উচ্চে তুলিয়াছেন,—তাঁহারা, ঐ অজর চিরপ্রিয় বৈষ্ণব কবিগণ। সে রাধাপ্রেমের ছায়া তাঁহারা হৃদয়ে ধরিতে পারিয়াছিলেন এবং সরস প্রেমপূর্ণ সুধামাখা ছন্দোবন্ধে জগৎসমক্ষে প্রতিভাত করিয়াছিলেন।

স্বর্গীয় বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর কহিয়াছেন—“এ জগতে বিশেষণের বাহুল্য”। এ কথা বড় সত্য। বিশেষণ না থাকিলে বিশেষ্যকে কে চিনিত! তাই মনে হয়, এই অমর কবিতাগুলি রাধাপ্রেমের বিশেষণ ভিন্ন আর কিছুই নহে। যাহাকে দেখিলে তাহার বিশেষ্যকে মনে পড়ে, বিশেষ্যের সেইটিই বিশেষণ, সেইটিই প্রতিবিম্ব, সেইটিই ছায়া।

যে বিরহ—শোকগাথা গাহিয়া অতীত দিবসের বৈষ্ণব-কবিগণ আপামর সকলকে উন্মত্ত করিয়াছিলেন, তাহারই একটি হস্তপদহীন পরিত্যক্ত মৃৎপুত্তলিকার মত, মৃত পুত্রের ছায়ার মত, এই ক্ষুদ্র, “যমুনা-পুলিনে বসে কাঁদে রাধা বিনোদিনী” পদটি সদানন্দের অশ্রু টানিয়া আনিতে সক্ষম হইয়াছিল। ক্ষুদ্র কবির ইহাই গৌরব,—ক্ষুদ্র কবিতার ইহাই মহত্ত্ব। ক্ষুদ্র ছায়া সদানন্দকে বশ করিতে পারিবে, কিন্তু রোহিণীকুমারের নিকটেও হয়ত যাইতে পারিবে না। তাহাতে ছায়ার অপরাধ কি?

মলিন বর্ষার দিনে আকাশের গায় নিবিড় জলদজাল বায়ুভরে চালিত হইতে দেখিলে মনে পড়ে, সেই যক্ষের কথা। মনে হয়, আজিও বুঝি তেমনি করিয়া উন্মত্ত যক্ষ ঐ মেঘপানে চাহিয়া প্রণয়িণীর সহিত কথা কহিতে চাহিতেছে। স্মরণ হয়, যেন যক্ষবধূর বিরহক্লিষ্ট ম্লান মুখশোভা কোথায় কোন্‌ মায়ার দেশে দেখিয়া আসিয়াছি। কিন্তু যে মনস্বী এই জীবন্ত মূর্তিময় মানসপটে গভীরভাবে অঙ্কিত করিয়া দিয়াছেন, জলদজাল সেই মহান্‌ প্রতিভার ছায়ামাত্র। আপনার শরীর সেই উজ্জ্বল জ্যোতির প্রতিবিম্ব বহিয়া লইয়া বেড়ায়, মেঘের ইহাই গর্ব! তাহার আনন্দ যে, সে মহতের আশ্রিত।

তাই পূর্বে বলিতেছিলাম, সমুদ্রের জল যাহা পারে, কূপের জল তাহা পারে না। যে-দুঃখে সদানন্দ রাধার জন্য কাঁদিতে পারিয়াছিল, সে-দুঃখে হয়ত শরৎ-শশীর জন্য কাঁদিতে পারিত না। ইহাতে সদানন্দের দোষ দিই না—শরৎ-শশীর অদৃষ্টের দোষ দিই। শরৎ-শশীর দুঃখে কাঁদাইতে হইলে আর কোন মনস্বীর প্রয়োজন—ক্ষুদ্র ছায়ার কর্ম নহে। ছায়ার নিজের মহত্ত্ব কিছুই নাই, সে যখন মহতের আশ্রিত হইতে পারিবে তখনই তাহার মহত্ত্ব। হইতে পারে সে রাজপথের ধূলা, কিন্তু বৃন্দাবনের পবিত্র রজঃ হইবার আকাঙ্ক্ষা যে তাহার একেবারে দুরাশা তাহাও মনে হয় না।

কিন্তু কথায় কথায় দরিদ্র সদানন্দের কথা ভুলিয়াছি। সে-রাত্রে সে আর উঠে নাই। প্রভাত হইলে রোহিণীকুমার জানালায় আসিয়া দেখিল, সদানন্দ তেমনি মাথা নিচু করিয়া বসিয়া আছে। কিছুক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিয়া ভাবিল, সদানন্দ কি বসিয়া ঘুমাইতে পারে? তাহার পর ডাকিল, “সদা—ও সদানন্দ!”

সদানন্দ জাগ্রত ছিল, উত্তর দিল, “কি?”

“জেগে আছ?”

“আছি”।

“সমস্ত রাত?”

“বোধ হয়।

রোহিণীকুমার বিস্মিত হইয়া মনে মনে ভাবিল, এ কিরূপ নেশা? তাহার পর একটু থামিয়া—একটু চিন্তা করিয়া বলিল, “সদানন্দ, মনে করিতেছি এ কু-অভ্যাসটা ছাড়িয়া দিব। তুমি শোও গে—আমি যাই। আর একদিন দেখা হবে।”

শ্রী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শ্রাবণ ১৩০৮ (‘যমুনা’, মাঘ ১৩২০)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top