অহংকারের পরিণতি : ঈশপের গল্প

অহংকারের পরিণতি

এক বিশাল বনের ধারে বিরাট একটি গাছ ছিল। তার শিকড় যেমন মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত ছিল তেমনি ডালপালাও চারপাশের অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছড়িয়েছিল। গাছটির ঘন পাতার রাশি সূর্যের আলো প্রতিরোধ করে মানুষকে ছায়া দিত। গাছটিতে অসংখ্য পাখি বাস করত। মানুষ ও পাখির সমাগমে গাছটির চারপাশের এলাকা মুখরিত থাকত।

এই বিরাট গাছটির নিচে একটি গাছের চারা গজিয়ে ওঠে। চারা গাছটি ছিল নমনীয় ও কোমল একটি হলদি গাছ। সামান্য একটু বাতাসেই তা নুয়ে পড়ত। একদিন দু’ প্রতিবেশী কথা বলছিল। হলদি গাছকে লক্ষ্য বড় গাছটি বলল: ওহে খুদে প্রতিবেশী, তুমি তোমার শিকড়গুলো মাটির আরো গভীরে প্রবেশ করাও না কেন? কেন আমার মত মাথা উঁচু করে দাঁড়াও না?

হলদি গাছটি মৃদু হেসে বলল: তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি এ ভাবেই নিরাপদ আছি।

বড় গাছটি বলল: নিরাপদ! তুমি কি মনে কর যে তুমি আমার চেয়ে নিরাপদে আছ? তুমি কি জান আমার শিকড় কত গভীরে প্রবেশ করেছে? আমার কাণ্ড কত মোটা ও শক্ত? এমনকি দু’জন লোক মিলেও আমার কাণ্ডের বেড় পাবে না। আমার শিকড় উৎপাটিত করবে ও আমাকে ধরাশায়ী করবে- এমন কে আছে?

আরও পড়ুন: হীরের হার (ছোটদের জন্য একটি সুন্দর গল্প )

বড় গাছটি বিরক্ত হয়ে হলদি গাছের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। কার ভাগ্যে কখন কী ঘটে তা কি কেউ বলতে পারে? হটাৎ একদিন সন্ধ্যায় ওই এলাকার ওপর দিয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেল। ঘূর্ণিঝড়ে শিকড়সহ বহু গাছ উপড়ে পড়ে, বনের গাছপালা একেবারে ধ্বংস হয়ে গেল।

ঝড়ের পর গ্রামবাসী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দেখতে বের হল। দেখল গগনচুম্বী গাছগুলোর অবস্থা একেবারে শোচনীয়। সেগুলো হয় উপড়ে পড়েছে অথবা ভেঙে চুরে শেষ হয়ে গেছে। সারা বনের মধ্যে যেন গাছপালার কঙ্কাল ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে শুধু একটি ব্যতিক্রম সবার নজর কাড়ে। তা হলো হলদি গাছ। সেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রবল ঝাপটার শিকার হয়ে এদিক ওদিক হেলে পড়েছে কিংবা মাটিতেও লুটিয়ে পড়েছে। ঝড় শেষ হয়ে যাবার পর সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ও আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তার বিরাট প্রতিবেশী গাছটির কোনো চিহ্নও দেখা গেল না।

অহংকারের পরিণতি সম্পর্কেও ঈশপ এরকম আরও গল্প বলেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top