উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী: ছোটবেলায় ছিল পড়াশুনা, আঁকা, বাজনা

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী – শিশুসাহিত্যিক, চিত্রকর, প্রকাশক, বেহালাবাদক ও সুরকার কেমন ছিলেন ছোটবেলায়

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী

ছোট্ট উপেন্দ্রকিশোরকে সবাই খুব পছন্দ করত। কারণ সে প্রতিদিন ক্লাসে পড়া পারে। পরীক্ষায় কখনো সেকেন্ড হয় না। সবসময় প্রথম। দুরন্ত মেধা আর বিপুল প্রতিভা। কিন্তু আজব ব্যাপার হল, স্কুলের পাঠ্যবিষয়ে তার একেবারেই আগ্রহ নেই। পড়াশোনাও করে না ঠিকমতো। সবাই ভাবে রাতে তো এক অক্ষরও পড়ে না। তবু প্রথম হয়।

শিক্ষকরা ধরে বসলেন। ‘কি ব্যাপার উপেন্দ্র? রাতে একটুও পড়াশোনা কর না। তবু প্রথম হও কী করে? ক্লাসে পড়াই বা দাও কেমন করে?’

আরও পড়ুন: ছোটবেলায় কেমন ছিলেন রাজা রামমোহন রায়

ঘাবড়ে গেল উপেন্দ্র। শিক্ষকরা এসব জানলেন কী করে? জবাব দিল, ‘শরৎ কাকা আমার পাশের ঘরেই থাকে। রোজ সন্ধ্যায় সে চিৎকার করে করে পড়া মুখস্ত করে। ওতেই আমার পড়া হয়ে যায় যে! দুজনে পড়তে গেলে অনর্থক গন্ডগোল বাড়ে।’

সত্যই তো! দুজন এক সঙ্গে গলা ফাটিয়ে পড়তে গেলে ঝামেলা হয়, তাই একজন পড়ে আর আরেকজন শোনে। আর যে জন শোনে, সে শুনে শুনেই পন্ডিত হতে বসেছে। কাজেই এ নিয়ে উপেন্দ্রকে তো কিছু বলা যায় না।

একবার স্কুল পরিদর্শনে এলেন ছোটলাট। ছোটলাটের নাম স্যার অ্যাশলি ইডেন। ছাত্ররা ক্লাসে মন দিয়ে লাট সাহেবের কথা শুনছে। লাট সাহেব ছাত্রদের নানা প্রশ্ন করছেন, ছাত্ররাও সেসব প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে। হঠাৎ ইডেন দেখলেন পিছনের বেঞ্চিতে বসা একটি ছেলে তাঁর কোনো কথাই শুনছে না। মাথা নিচু করে কিছু একটা করছে।

ক্লাসে উপস্থিত শিক্ষকদেরও নজরে পড়েছে সেটা। শঙ্কিত হয়ে উঠলেন সব শিক্ষক। এই অমনোযোগী ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা গেল না! না জানি সাহেব কী মনে করেন। চুপি চুপি ছেলেটির কাছে গেলেন ইডেন। দেখলেন ছেলেটি একমনে খুব মনোযোগ দিয়ে একটা প্রতিকৃতি আঁকছে। আর সেটা স্বয়ং অ্যাশলি ইডেনের প্রতিকৃতি। খুশি হলেন ইডেন সাহেব।

তারপর উপেন্দ্রর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, ‘কখনও আঁকা ছেড়ো না। চালিয়ে যেও।’

এভাবেই চলতে থাকে। ছবি আঁকা আর বেহালা বাজানো ছাড়া উপেন্দ্রর যেন আর কোনো কাজ নেই। তাই প্রবেশিকা পরীক্ষার ঠিক আগে প্রধান শিক্ষক মশাই উপেন্দ্রকে ডেকে পাঠালেন। উপেন্দ্রনাথকে বললেন, ‘তোমার উপর আমরা অনেক আশা করে আছি। দেখো, তুমি যেন আমাদের নিরাশ কোরো না।’

প্রধান শিক্ষকের কথায় এতটাই অনুতপ্ত হলেন যে, সাধের বেহালাটা নিজেই ভেঙে ফেললেন। ১৮৭৯ সালে বৃত্তিসহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন উপেন্দ্রকিশোর। বৃত্তি বাবদ পেয়েছিলেন বারো টাকা। সেই টাকা আর বন্ধুদের নিয়ে ছুটলেন ‘ব্রাহ্ম দোকানে’। বৃত্তির টাকায় ভোজ দিলেন বন্ধুদের।