ঈশপ কে ছিলেন? : ঈশপের গল্প – জেনে নেওয়া যাক তাঁর বিস্ময়কর যাত্রা

ঈশপ কে ছিলেন?

ঈশপ কে ছিলেন? ঈশপ ছিলেন একজন রক্ত-মাংসের মানুষ যিনি খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বেঁচে ছিলেন। তিনি ছয়শোরও বেশি কল্পকাহিনী লিখেছিলেন। ঈশপের কল্পকাহিনীগুলি ছিল ছোট ছোট গল্প। এগুলির মধ্যে নৈতিক বা পাঠ শেখানোর বিষয় থাকে। ঈশপের কল্পকাহিনীগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল যে তার গল্পের চরিত্রগুলি মানুষের বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণী। তাঁর গল্পগুলির মধ্যে নৈতিক বা শিক্ষণীয় বিষয় অবশ্যই থাকবে । কল্পকাহিনী মুখে বলার মাধ্যমে অনেক নীতি-কথা ব্যক্ত করে আধুনিক বিশ্বে অমর হয়ে রয়েছেন।

ঈশপ কে ছিলেন? : একটি বিস্ময়কর জীবন

অনেক অনেক দিন আগের কথা। তখনও গ্রিস আর রোমের সভ্যতা ছিল দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সভ্যতা। কিন্তু সেই সময়েও পৃথিবীতে চলত অন্য এক কঠিন নিয়ম— কিছু মানুষ ছিল স্বাধীন, আর কিছু মানুষ ছিল দাস। এই দাসদের জীবন ছিল খুব কঠিন। তাদের নিজেদের কোনো ইচ্ছা-স্বাধীনতা ছিল না।

ঠিক এমনই একজন দাস ছিলেন ঈশপ। কিন্তু সাধারণ দাসদের থেকে তিনি ছিলেন একেবারেই আলাদা। কেন জানো? কারণ, ঈশপ ছিলেন অসম্ভব বুদ্ধিমান! তাঁর কথা বলার ধরন, গল্প বলার কৌশল, আর মানুষের ভাবনা বুঝে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। কিন্তু কেমন ছিল তাঁর জীবন? আসো, শোনা যাক এক আশ্চর্য গল্প!

আরও পড়ুন: গোপাল ভাঁড়ের 10টি সেরা হাসির গল্প পড়ুন

এক ক্রীতদাসের জন্ম

অনেকেই বলেন, ঈশপ জন্মেছিলেন আজকের তুরস্কের কাছাকাছি কোনো এক জায়গায়, খ্রিস্টপূর্ব ৬২০ থেকে ৫৬০ সালের মধ্যে। তবে কোথায়, সেটি কেউ ঠিক নিশ্চিত করে বলতে পারে না। এমনকি আফ্রিকা, জাপান আর ইংল্যান্ডের কিছু লোকও দাবি করেছিল যে, ঈশপ তাঁদের দেশেরই মানুষ!

তবে জন্ম যেখানে-ই হোক না কেন, ঈশপের শৈশব কিন্তু ছিল কষ্টের। তিনি ছিলেন একজন ক্রীতদাস। তাঁর মালিক ছিলেন কঠোর মানুষ, যিনি ঈশপকে অবহেলা করতেন। তাছাড়া, ঈশপ দেখতে খুব সুন্দরও ছিলেন না। তাঁর চেহারা দেখে, গলার আওয়াজ শুনে, অন্যরা অনেক সময় তাঁকে নিয়ে মজা করত, ব্যঙ্গ করত। কিন্তু ঈশপ কি দমে গিয়েছিলেন? মোটেও না!

বুদ্ধির জোরেই মুক্তি

ঈশপের ভাগ্যে পরিবর্তন আসে তখন, যখন তিনি অন্য এক মালিকের কাছে গেলেন। নতুন মনিব ছিলেন বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ। তিনি ঈশপের অসাধারণ বুদ্ধি দেখে অবাক হয়ে গেলেন! কেবল গল্প বলার মাধ্যমে ঈশপ মানুষকে হাসাতে পারতেন, ভাবাতে পারতেন, এমনকি শেখাতেও পারতেন। এই গুণ দেখে তাঁর মনিব একদিন বললেন, “তুমি এত বুদ্ধিমান! তোমার তো দাস হয়ে থাকার কথা নয়।” আর তারপরই ঈশপকে তিনি মুক্তি দিয়ে দিলেন।

মুক্ত হয়েই ঈশপ বেরিয়ে পড়লেন নতুন এক জগতে। তিনি রাজা-বাদশাদের দরবারে গেলেন, মানুষের ভিড়ে গিয়ে গল্প শুনিয়ে মন জয় করলেন। তাঁর গল্প ছিল খুব সাধারণ, কিন্তু প্রতিটি গল্পের মধ্যে ছিল এক গভীর শিক্ষা।

আরও পড়ুন: পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানা’র পৌরাণিক গল্প – চালাক মাকড়সা আনান্সি

গল্পের জাদু ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে

গ্রিস, রোমের রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ল ঈশপের গল্প। রাজা থেকে সাধারণ মানুষ— সবাই তাঁর গল্প শুনে মুগ্ধ হত। এমনকি শোনা যায়, বন্দি অবস্থায় বসে মহাজ্ঞানী সক্রেটিস পর্যন্ত ঈশপের কিছু গল্প লিখে রেখেছিলেন!

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় জানো? ঈশপ কখনোই নিজের গল্পগুলো নিজে লিখে রাখেননি। তাই তাঁর মৃত্যুর বহু বছর পর, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে ডেমেত্রিয়াস নামে এক ব্যক্তি প্রথমবার তাঁর গল্পগুলো একত্র করে লিখিত আকারে প্রকাশ করেন। তারপর থেকে এই গল্পগুলোই হয়ে উঠল দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় নীতিকথার গল্প।

আজও আমরা যখন শেয়াল ও কাকের গল্প, খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড়ের গল্প শুনি, তখন কি ভাবতে পারি, সেই গল্পগুলোর স্রষ্টা ছিলেন এক বুদ্ধিমান ক্রীতদাস? যিনি কেবল গল্পের মাধ্যমেই জয় করেছিলেন দুনিয়া?

এটাই তো আসল শিক্ষা, তাই না? জন্ম কিংবা চেহারা নয়, মানুষের সত্যিকারের শক্তি লুকিয়ে থাকে তার জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, আর গল্প বলার ক্ষমতায়!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top