বাবুর্চির বুদ্ধি একটি হাস্যরসপূর্ণ গল্প। গল্পের সরল ও বুদ্ধিদীপ্ত বাবুর্চী তার অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করলেও নবাব বাবুর্চীকে ছোট অপরাধের জন্য শাস্তি না দিয়ে কেবল কৌতুকপূর্ণ ভাবে জানিয়ে দেন বাবুর্চীর মিথ্যা তিনি ধরে ফেলেছেন।
বাবুর্চির বুদ্ধি – কেমন একবার দেখে নেওয়া যাক কি বল?
কোনো এক দেশের নবাব খেতে বসেছেন। বকের মাংস দিয়ে ভাত খাবেন। রান্না বেশ ভালো হয়েছে।
প্রথমে তিনি একখানা রান খেলেন। দারুণ স্বাদ। তখন আরও একখানা রান পাতে তুলে দিতে বললেন।
কিন্তু রান্না করার সময় মাংসের চমৎকার ঘ্রাণে বাবুর্চি লোভ সামলাতে না পেরে একখানা রান খেয়ে ফেলেছেন।
তাই ভয়ে, আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে বাবুর্চি বললেন: হুজুর, ওটা তো বক পাখি ছিল। বক পাখির একখানা পা থাকে। তাই একখানা পা-ই রান্না করেছি।
নবাব সাহেব বাবুর্চির কথা শুনে রেগে লাল হয়ে গেলেন। বললেন: ছোঁচা, তুই কোন সাহসে একখানা রান খেয়ে ফেলে এখন মিথ্যা কথা বলছিস?
বাবুর্চি: না হুজুর, আমি এক তিলও মিথ্যে বলিনি। বক বড়ো হলে তার একখানা পা-ই থাকে। আমার সঙ্গে বিলের ধারে চলুন, দেখবেন, বক সব এক পায়ে দাঁড়িয়ে।
আরও পড়ুন: কৈলাশ পর্বত একটি রহস্যময় স্থান – জানুন আজও কেন অজেয়
নবাব, একটু মুচকি হেসে খাওয়া শেষ করলেন। তারপর, পাইক বরকন্দাজসহ বাবুর্চিকে নিয়ে বিলের দিকে চললেন। বিলের ধারে যেতেই বাবুর্চি চিৎকার দিয়ে বলল: হুজুর, ওই দেখুন, ডানদিকে ঝোপের ছায়ায় একটা একপেয়ে বক।
নবাব হাসলেন। তবে কোনো শব্দ করলেন না। তারপর জোরে দুই-তিনবার হাততালি দিলেন। ঘাসের ঝোপের ছায়ায় আরামে ঝিমুতে থাকা বকটি হাততালির শব্দে ভয় পেয়ে উড়াল দিল। আর তখনই তার দুই খানা পা বেরিয়ে পড়ল।
নবাব এবার অট্টহাসি দিয়ে বললেন: কি হে বাবুর্চি, বকের তো দেখি দুই খানাই পা!
বাবুর্চি: হুজুর, আপনি হাততালি দেয়াতেই দুই খানা পা বেরুল! ইস! সেদিন খাবার সময় কেন যে হাততালি দিলেন না, হুজুর! দিলেই দুই খানা রান পাওয়া যেত।
নবাব বেশ মজা পাচ্ছিলেন। পরিস্থিতিটা তিনি উপভোগও করছিলেন। তাই হাসতে হাসতে বললেন: আমি কি জানতাম যে, হাততালি দিলেই দুই খানা রান পাব? জানলে কি আর হাততালি না দিতাম। কিন্তু বাবুর্চি, আমি না হয় বোকার মতো হাততালি দেইনি, তুমি তো দিতে পারতে। তাহলে তো আমি দুই খানা রানই খেতে পারতাম!
আরও পড়ুন: কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ক্ষুদ্রের গৌরব’
বাবুর্চি: হুজুর, আমার কি অতটুকু বুদ্ধিও নেই! হাততালি দিলে পাতের বকটা উড়ে যেত না? তবু তো হুজুরকে একখানা রান খাওয়াতে পেরেছি। উড়ে গেলে তো তাও খাওয়াতে পারতাম না। আমার জন্য সে যে বড়ো কষ্টের ব্যাপার হতো! আর আপনাকে মাংস ছাড়া খানা আমি কোন মুখে খাওয়াতাম?