নীল সাগরের ক্ষুদে দৈত্য ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছ

ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছ এক ধরনের সামুদ্রিক ও গভীর জলের মাছ। এরা সমুদ্রের উপরিতলে আসে না। কখনো কখনো এই মাছ মারা গেলে উপরে ভেসে ওঠে ।

ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার
Picture credit: oddfeed.net

এই যে নীল সমুদ্র, কত বিচিত্র প্রাণ, এর কতটুকু আসলে জানি আমরা? মুগ্ধ বিস্ময়ে নীল-সবুজের সৌন্দর্য তো নিয়ত দেখতে পাই, কিন্তু প্রকৃতির অদ্ভুত নির্মমতা কতটুকু দেখি? প্রকৃতির এই নির্মমতাই আসলে বেঁচে থাকার লড়াইকে আরও কঠোর করে চলেছে যুগ যুগ ধরে । অকুল সমুদ্রের মাঝের এমন এক বিচিত্র প্রাণী ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছ । এই মাছটাকে এক কথায় বলা যায় দুঃস্বপ্ন! আবার, আমাদের সৌভাগ্যও বলা যায় কারণ এরা সমুদ্রের উপরিভাগে থাকে না। না হলে, এদের কাজকর্ম আমাদের ঘুম কেড়ে নিত ।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, এরা কিন্তু দৈর্ঘ্যে খুবই ছোট। সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্যই হয় এক ফুটের মতো। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে দৈঘ্যের পরিমাণ হয় ৬-৮ ইঞ্চি। কিন্তু মুখটা প্রকাণ্ড। বিশাল সব শিকার গিলে ফেলতে পারে অনায়াসে। নিজেদের থেকে বিশাল কাউকে চট করে গিলে ফেলা তো সহজ কথা নয়। কাজেই, রেজর ব্লেডের মতো ধারালো দাঁত রয়েছে এদের। আর, একবার শিকার মুখে ঢুকে গেলে আর যাতে বেরিয়ে আসতে না পারে, সে জন্য রয়েছে কাঁটাযুক্ত তালু। কিন্তু খালি গিললেই তো হবে না, জায়গাও তো দিতে হবে।

আরও পড়ুন: পয়েন্ট নিমো একটি রহস্যময় জায়গা, এটা কি কবরস্থান নাকি মরুভূমি?

ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছের ছোট্ট দেহের নিচে একটি বেলুনের মতো পেট আছে এদের। নিজ দৈর্ঘ্যের প্রায় দ্বিগুণ এবং ভরের দিক থেকে নিজের দশ গুণ ওজনের যেকোনো মাছকে আস্ত গিলে ফেলতে পারে! শিকারকে এরা ঠেসে পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে। একেবারে আস্ত আঁটানো চাই! আঁটানোর জন্য তীক্ষ্ণ দাঁত ব্যবহার করতে কোনো রকম কার্পণ্য করে না এরা।

ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছ
Picture credit: ocean.si.edu


শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও এদের কাজের ধরন আসলে খুব সরল। এরা থাকে আটলান্টিক মহাসাগরের ট্রপিক্যাল ও সাবট্রপিক্যাল অংশে, সমুদ্র পৃষ্ঠতল থেকে ৩,৩০০ থেকে ১৩,০০০ ফুট নিচে। অন্ধকার এই গভীর জলে খুব সহজে শিকার পাওয়া যায় না। তাই কোনোক্রমে একটা শিকার পেলেই এরা একবারে পুরোটা গিলে নিয়ে সেটা জমিয়ে রাখে তাদের পেটের নিচের দিকে একটা বড় থলিতে । পরে ওই জমানো খাদ্য থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি আহরণ করে।

কিন্তু সবসময় ব্যাপারটা এত সহজ ও শান্তিপূর্ণ হয় না । সবকিছুরই একটা সীমা আছে তো! অনেক সময়, খাদ্য সংগ্রহের পরিমাণ অতিরিক্ত বেশি হলে যথা সময়ে এরা পুরো খাবার হজম করতে পারে না। তখন এই খাবার ওদের শরীরের নিচের থলিতে পচতে শুরু করে, ফলে গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস পেটের মধ্যে চাপ দিতে থাকে। ফলাফল, ক্ষেত্রবিশেষে বিস্ফোরিতও হতে দেখা যায় ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার মাছকে ! অনেক সময় বিস্ফোরণের ফলে ব্ল্যাক সোয়ালোয়ারের মৃতদেহ ভেসে ওঠে সমদ্রপৃষ্ঠে।

আরও পড়ুন: চালাক মাকড়সা আনান্সির গল্প – ঘানা’র একটি পৌরাণিক গল্প

এই ভেসে ওঠা মৃতদেহ থেকেই এদের ব্যাপারে যা কিছুটা জানা গিয়েছে। যেমন এদের ডিমের আকার হয় সাধারণত ১১ মিলিমিটারের মতো। আর দেখা গেছে, বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝের সময়টায় পাওয়া মৃতদেহগুলোর পেটেই কেবল ডিম পাওয়া গেছে। তার মানে, এই সময়টাই তাদের প্রজননের সময়।

২০০৭ সালে এরকম একটি ব্ল্যাক সোয়ালোয়ার ম্যাচের মৃতদেহ ভেসে উঠেছিল সমুদ্রপৃষ্ঠে। এর পেটের নিচের থলি থেকে স্নেক ম্যাকারেল নামে একটি মাছের দেহ পাওয়া গিয়েছিল, যার দৈর্ঘ্য ছিল ৩৪ ইঞ্চি কিন্তু ক্ষুদে দৈত্যের নিজের দৈর্ঘ্যের প্রায় সাড়ে চারগুণ!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top