অষ্টাদশ শতকে জমিদার রামকান্ত রায়ের ছেলে রামমোহন। ফুটফুটে তার চেহারা, নাদুস নুদুস শরীর। খুব দুরন্ত, তবু লেখাপড়ায় তার ভারী মনোযোগ। অক্ষর-পরিচয় হতে রামমোহনের দু’তিন দিনের বেশি লাগলনা। ফলা-বানান এবং যুক্ত-অক্ষরও তিনি দু’তিন দিনের মধ্যে শিখে ফেললেন।
সেকালের হিন্দুদের মধ্যে আরবি ও ফারসি শেখার রেওয়াজ ছিল। ওই ভাষা না শিখলে সরকারি কাজকর্মে খুব অসুবিধে হতো। রামকান্ত তাই ছেলেকে আরবি ও ফারসি শেখাবার ব্যবস্থা করলেন। বালক রামমোহন অল্পদিনের মধ্যে ওই দুটি ভাষা শিখে মৌলভীদের পর্যন্ত তাক লাগিয়ে দিলেন। তারপর তাকে সংস্কৃত শেখানো হতে লাগলো। সংস্কৃত অতি কঠিন ভাষা অথচ কয়েক মাসের মধ্যেই রামমোহন সংস্কৃত ভাষায় পণ্ডিত হয়ে উঠলেন।
একবার, রামমোহনের বয়স তখন খুবই কম। মা তারিনী দেবী ছেলেকে নিয়ে তাঁর বাপের বাড়িতে গেলেন। তারিনী দেবীর বাবা শ্যাম ভট্টাচার্য শিব পূজা করতেন। তিনি একদিন পূজা শেষ করে একটি বেলপাতা রামমোহনের হাতে দিলেন। বালক রামমোহন বেলপাতাটি মাথায় না ছুঁইয়ে চিবিয়ে খেতে লাগল। শ্যাম ভট্টাচার্য নাতিকে অভিশাপ দিলেন- তুই বিধর্মী হবি।
মা তারিনী দেবী সে কথা শুনে কান্নাকাটি করতে লাগলেন। তখন শ্যামচরণ মেয়েকে সান্তনা দেবার জন্য বললেন-“তোর ছেলে মহাপন্ডিত হবে, রাজার মত সম্মান পাবে।“
বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের অভিশাপ ও আশীর্বাদ দুই সফল হয়েছিল। রামমোহন ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচার করেছিলেন এবং “সতীদাহ” সহ দেশের আরও অনেক কুসংস্কার দূর করেছিলেন। দেশ-বিদেশে তিনি পেয়েছিলেন রাজার মত সম্মান।