ঈশ্বরচন্দ্রের বয়স তখন চার বছর পাঁচ মাস। পিতা ঠাকুরদাস বন্দোপাধ্যায় তাকে পাঠশালায় ভর্তি করিয়ে দিলেন। পাঠশালায় পন্ডিত কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায় স্বরবর্ণের পাতা খুলে ঈশ্বরচন্দ্রকে বললেন-“পড়ো অ.আ.ই.ঈ।” দু-তিনবার পড়ানোর পর ঈশ্বরচন্দ্র সবগুলো অক্ষর শিখে ফেলল।
পণ্ডিতমশাই ভাবলেন, স্বরবর্ণ পর্যন্ত সেদিন নতুন ছাত্রটিকে পড়াবেন। কিন্তু ঈশ্বর আরো শিখতে চায়। তখন পণ্ডিতমশাই ব্যঞ্জনবর্ণও তাকে সেখালেন। দু-তিনবার পড়েই সমস্ত ব্যঞ্জনবর্ণ ঈশ্বরচন্দ্রের মুখস্থ হয়ে গেল। শুধু মুখস্ত নয়-লিখতেও সে শিখে ফেলল। পণ্ডিত মশাই অবাক! ঈশ্বরচন্দ্র তিন বছরের মধ্যেই পাঠশালার পড়া শেষ করে ফেলল। পন্ডিত কালীকান্ত একদিন ঠাকুরদাসের এর কাছে বললেন-“আমার পাঠশালায় ঈশ্বর তিন বছরে যা শিখেছে, পাঁ-ছ’বছরেও অন্য ছেলেরা তা পারে না। এবার ওকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে পড়ান।”
আরও পড়ুন: বাংলার বাঘ ছেলেবেলায় কেমন ছিলেন
ঐ ছোট বয়সেই ঈশ্বরচন্দ্র বাবার সঙ্গে পায়ে হেঁটে কলকাতা চলল। পথে যেতে যেতে দেখতে পেল মাইলস্টোনের ওপর ইংরেজি অক্ষর। তা দেখে পথের দূরত্ব জানা যায়। একবার করে দেখেই ইংরেজি সব অক্ষর সে শিখে ফেলল।
সংস্কৃত কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র মাত্র আট বছর বয়সে ভর্তি হল। এত কম বয়সে কোন ছেলে সংস্কৃত কলেজে এর আগে ভর্তি হয়নি। তার প্রতিভা দেখে অধ্যাপকরাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
সবাই ভেবেছিলেন এই ছেলে বড় হয়ে মস্ত বড় পন্ডিত হবে। সে ভাবনা সত্যি হয়েছিল অতি অল্প বয়সেই ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেছিলেন। আজও সকলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে মাথা নোয়ায়।