অনেক দিন আগের কথা। নীল আকাশের নিচে নীল সাগরের নীল জলে নীল জেলে বসবাস করত। তার নাম নীল কেন রাখা হয়েছে তা কেউ জানতনা। কিন্তু কাকতলীয় ভাবে নীল জেলের বেঁচে থাকার মাঝে প্রকৃতির কত নীলেরই সমাগম হয়েছিল।
ছোট্ট নীল জেলে প্রতিদিনই তার বাবাকে মাছ ধরতে সাহায্য করতে সাগরে আসত। সে খুব উদার ছিল। বাবার অলক্ষে অনেক বাচ্চা মাছকেই সে জলে ছেড়ে দিত। বাবার জালে আটকে থাকা মাছগুলোকে দেখে তার খুব কষ্ট হত। কেমন ছট্ ফট্ করত ওগুলো।
একদিন হল কি, নীল জেলের বাবার জালে একটা কচ্ছপ আটকা পড়ল। কচ্ছপরা সব সময় ভান ধরে থাকতে পছন্দ করে। জালে আটকে যাওয়া কচ্ছপটিও মরার মত চুপটি করে রইল। নীল জেলের বাবা ছোট কচ্ছপটিকে মরা মনে করে নৌকাতেই ফেলে রাখল। এদিকে কচ্ছপ ছানার যায় যায় অবস্থা। জল ছাড়া আর কতক্ষণ বেঁচে থাকা যায়। সেদিন নীল আকাশের প্রখর সূর্যটা এতটুকুও বিশ্রাম নিচ্ছিলনা। প্রচণ্ড রোদে কচ্ছপ ছানার শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবার যোগাড়। কচ্ছপ ছানা দূর্বল হয়ে গেলেও বুদ্ধি লোপ পায়নি। সে অনেকক্ষন ধরেই খেয়াল করছিল নীলের কান্ড কারখানা। নীল তার বাবার জাল থেকে নিশব্দে করে মাছ ছেড়ে দিচ্ছে। তাই সে মনে মনে চিন্তা করছিল, কখন সে নীলের চোখে পড়বে।
আরও পড়ুন: আমাদের আনন্দ বা রাগের প্রতিক্রিয়া কে ঠিক করবে?
এদিকে বাবার সাথে মাছ সংগ্রহ করতে করতে নীল জেলে হাপিয়ে উঠেছিল। একটু বিশ্রাম নিবে বলে সবেমাত্র বসল। কিন্তু ভুল করে কচ্ছপ ছানাটির উপড়েই বসে পড়ল। ছোট্ট কচ্ছপ অনেক কষ্টে নড়ে উঠল। নীল ভয় পেয়ে গেল, তার নিচ থেকে কে নড়ছে? উঠে বসতেই দেখল, সে একটি ছোট্ট কচ্ছপের উপর বসে ছিল। কচ্ছপটির জন্য তার খুব মায়া হল। সে কচ্ছপটিকে আদর করে হাতে নিল। মনে হচ্ছিল কচ্ছপটি মারা গেছে। কিন্তু কচ্ছপটি তার খোলসের ভিতর থেকে মাথা বের করল, তা দেখে নীলের আনন্দ আর ধরে না ! সে নাচতে লাগল।
নীল হঠাৎ নাচা নাচি বন্ধ করে দিল। কারন তার মনে হল, কেউ যেন তাকে ডাকছিল, কিন্তু কে ডাকছে তা বুঝতে পারছিলনা। একসময় বুঝতে পারল যে তার হাতে থাকা কচ্ছপটিই তাকে ডাকছে। কচ্ছপটি মাথা বের করে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল, “ও ভাই ছোট্ট জেলে, আমাকে জলে ছেড়ে দাওনা, আমি কচ্ছপদের কাছে ফিরে যাই”। নীলের খুব মায়া হল, সে তাকে জলে ছেড়ে দিল।
আরও পড়ুন: হাল ছেড়ে দাও বন্ধু! – সত্যই কি? আগে গল্পটি পড়ে দেখতে হবে
সন্ধ্যা বেলায় নীল সাগরের মাঝে প্রচণ্ড ঢেউ উঠল। ঝড় উঠেছে কিন্তু নীলদের নৌকা তখনও পাড়ে আসতে পারেনি। একসময় নীলদের ছোট্ট নৌকাটা ঝড়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ভেসে থাকতে পারলনা। সেটি ডুবে গেল। বাবা নীলের হাত ধরে ছিল, ঢেউয়ের প্রকোপে হাত ছেড়ে গেল। নীল আস্তে আস্তে জলে তলিয়ে যেতে লাগল। সে দেখল জলের তলায় জলগুলো যেন ভেংচি কাটছে। তার দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। ঠিক তখনই কিছু একটা তাকে জলের উপরে তুলে ধরল। নীল চেয়ে দেখল তাকে দুটি কচ্ছপ ভাসিয়ে ডাঙ্গায় নিয়ে যাচ্ছে। আর পাশ থেকে কানের কাছে চুপিচুপি কেউ বলে যাচ্ছে, “বন্ধু তোমায় প্রতিদান দিয়ে গেলাম”