মোল্লা নাসিরুদ্দিনের নামে অনেক গল্প প্রায় হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর নানান দেশে লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের মতে এইসব গল্পের জন্ম তুরস্কদেশে, কারণ সেখানে এখনো প্রতি বছর মোল্লা নাসিরুদ্দিনের জন্মোৎসব পালন করা হয়।
মোল্লা নাসিরুদ্দিন যে ঠিক কেমন লোক ছিলেন সেটা তার গল্প পড়ে বোঝা মুশকিল। এক এক সময় তাকে মনে হয় বোকা, আবার এক এক সময় মনে হয় ভারী বিজ্ঞ। তোমাদের কী মনে হয় সেটা তোমরাই বুঝে নিও।
মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প – পর্ব ২
1. গাধার ডাককে যে বেশি বিশ্বাস করে
এক পড়শি এসেছে নাসিরুদ্দিনের কাছে এক আর্জি নিয়ে।
মোল্লাসাহেব, আপনার গাধাটা যদি কিছুদিনের জন্য ধার দেন তো বড় উপকার হয়।
মাফ করবেন, বললে নাসিরুদ্দিন, ওটা আরেকজনকে ধার দিয়েছি।
কথাটা বলামাত্র বাড়ির পিছন থেকে গাধা ডেকে উঠে তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে দিল।
সে কী মোল্লাসাহেব, ওটা আপনারই গাধার ডাক শুনলাম না?
নাসিরুদ্দিন মহারাগে লোকটার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়ার সময় বললে, আমার কথার চেয়ে আমার গাধার ডাককে যে বেশি বিশ্বাস করে, তাকে কোনওমতেই গাধা ধার দেওয়া চলে না।
2. ঝড়ে উড়িয়ে এনে ফেলেছে
নাসিরুদ্দিন মওকা বুঝে একজনের সবজির বাগানে গিয়ে হাতের সামনে যা পায় থলেতে ভরতে শুরু করেছে।
এদিকে মালিক এসে পড়েছেন। কাণ্ড দেখে তিনি হন্তদন্ত নাসিরুদ্দিনের দিকে ছুটে এসে বললেন, ব্যাপারটা কী?
নাসিরুদ্দিন বললে, ঝড়ে উড়িয়ে এনে ফেলেছে আমায় এখানে।
আর খেতের সবজিগুলোকে উপড়ে ফেলল কে?
ওড়ার পথে ওগুলিকে খামচে ধরে তবে তো রক্ষা পেলাম।
আর সবজিগুলো থলের মধ্যে গেল কী করে?
সেই প্রশ্নই তো আমাকেও চিন্তায় ফেলেছিল, এমন সময় আপনি এসে পড়লেন।
আরও পড়ুন: নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প পর্ব-২
3. অপয়া যে কে! – মোল্লা নাসিরুদ্দিন
শিকারে বেরিয়ে পথে প্রথমেই নাসিরুদ্দীনের সামনে পড়ে রাজামশাই খেপে উঠলেন।
লোকটা অপয়া। আজ আমার শিকার পণ্ড- ”ওকে চাবকে হটিয়ে দাও”
রাজার হুকুম তামিল হল।
কিন্তু শিকার হলো জবরদস্ত।
রাজা শিকার থেকে ফিরে নাসিরুদ্দীনকে ডেকে পাঠালেন,
বললেন- ‘ভুল হয়ে গেছে মোল্লা। আমি ভেবেছিলাম তুমি অপয়া। এখন দেখছি তা নও”
নাসিরুদ্দীন তিন হাত লাফিয়ে উঠে জবাব দিল- ”আপনি ভেবেছিলেন আমি অপয়া?
আমায় দেখে আপনি ২৬টি হরিণ মারলেন, আর আপনাকে দেখে আমি ২৬ ঘা চাবুক খেলাম।
অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পারলেন না?”
4. অর্ধেক ভাগ – মোল্লা নাসিরুদ্দিন
একবার নাসিরউদ্দিন হোজ্জা বাদশাহর জন্য কিছু উপহার নিয়ে যাচ্ছিল। গেটে প্রহরী হোজ্জাকে আটকে দিল। বলল, তোমার উপহার আমাকে দাও, আমিই জাঁহাপনাকে দিয়ে আসব।
কিন্তু হোজ্জা নিজেই উপহার দিয়ে আসতে চায়। এদিকে প্রহরীও নাছোড়বান্দা।
শেষ পর্যন্ত হোজ্জা বলল, ‘ঠিক আছে, আমি ভিতরে গিয়ে বাদশাহরকাছ তেকে যা বখশিশ পাব, তার অর্ধেক তোমাকে দিয়ে দিব।’
একথা শুনে প্রহরী হোজ্জাকে ভিতরে যেতে দিল।
হোজ্জা দরবারে গিয়ে বাদশাহকে উপহার দেওয়ার পর বাদশাহ খুব খুশি হলেন এবং হোজ্জাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তার কী চাই?হোজ্জা বলল ৫০ ঘা বেত্রাঘাত! দরবারের সবাই তো অবাক! এ কেমন উপহার চাওয়া?
বাদশাহ যতই অন্য উপহার দিতে চান, হোজ্জা ততই বেতের বাড়ি নিতে চায়।মহা মুসিবত। শেষ পর্যন্ত হোজ্জার জেদের কাছে হেরে গিয়ে বাদশাহ নির্দেশ দিলেন হোজ্জাকে বেত মারার।
২৫ ঘা বেত মারার পর হোজ্জা থামতে বলল। তারপর বাদশাহর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘জাঁহাপনা, আমার পুরস্কারের একজন ভাগীদার আছে।’
বাদশাহ জানতে চাইলেন, ‘কে?’ তখন হোজ্জা দরবারে আসার পথে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। পুরো ঘটনা জানার পর বাদশাহ তখন ঐ প্রহরীকে ডেকে আচ্ছাসে বেত্রাঘাত করে তার পাওনা মিটিয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন: রহস্যময় উত্তর সেন্টিনেল দ্বীপ -পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বিচ্ছিন্ন অঞ্চল
5. বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে
হোজ্জা এক কেজি মাংস কিনে এনে গিন্নিকে দিলেন রান্না করতে দিয়ে বলল- ”মাংস গুলো রান্না কর, আমি গোসল করে আসছি”
এদিকে গিন্নি মাংস রান্না করতে গিয়ে একটু একটু টেস্ট করতে করতে সব মাংস খেয়ে ফেললো।
হোজ্জা নদী থেকে গোসল সেরে এসে খেতে বসে মাংস না দেখে জিজ্ঞাসা করলে –
গিন্নি জানালো, বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে।
হোজ্জা তাড়াতাড়ি বিড়ালটাকে ধরে ওজন করে দেখলেন যে সেটার ওজন এক কেজি।
গিন্নিকে তখন বললেন, ‘এটা যদি বিড়াল হয় তবে মাংস কোথায়, আর এটা যদি মাংস হয় তবে বিড়ালটা কোথায়?
6. সবই একবারে এনেছি – নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
মোল্লা এক বাড়িতে চাকরের কাজ করছে। মনিব তাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি অযথা সময় নষ্ট কর কেন, তিনটা ডিম কিনতে কেউ তিনবার বাজারে যায়? এবার থেকে সব কাজ একবারে সেরে আসবে।’
একদিন মনিব অসুখে পড়লে মোল্লাকে বললেন ডাক্তার ডাকো।
মোল্লা গেল কিন্তু ফিরলো অনেক দেরিতে আর সাথে অনেক লোক।
মনিব বললেন, ‘ডাক্তার কই?’
তিনি আছেন সাথে আরো অনেকে আছেন, বললো মোল্লা।
– আরো কেন?
– আজ্ঞে ডাক্তার বললো পুলটিশ দিতে লোক চাই। জল গরম করতে কয়লা লাগবে, কয়লাওয়ালা চাই। আপনি যদি মারা যান তো দোয়া পড়ার লোক চাই। আপনাকে কবর দেওয়ার লোক চাই, আপনি মরলে পরে লাশ বইবার লোক চাই। তাই সবই একবারে এনেছি।
7. লবণ দিয়ে খাই – নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
হোজ্জা আর তার এক বন্ধু একবার এক হোটেলে ঢুকল কিছু খাওয়ার জন্য। খাওয়া শেষে হিসাব করে দেখল যে, দুই গ্লাস দুধ খাওয়ার মতো টাকা ওদের হাতে নেই। তাই দুজনের জন্য এক গ্লাস দুধ চাইল।
দুধ আসার পর হোজ্জার বন্ধুটি বলল, ‘ভাই, তুমি আগে অর্ধেকটা খেয়ে ফেল।
হোজ্জা জানতে চাইল, ‘কেন?’
বন্ধুটি বলল, ‘আমি আবার চিনি ছাড়া দুধ খেতে পারি না। অথচ, একজনের খাওয়ার মতোই চিনি আছে আমার কাছে। তাই বলছিলাম যে, তুমি অর্ধেকটা খেয়ে নিলে বাকিটা আমি চিনি দিয়ে খাব।’
হোজ্জা তখন গ্লাসটা হাতে নিয়ে তার মধ্যে অনেকটা লবণ ঢেলে বলল, ‘তাহলে আমার অর্ধেক ভাগটা আমি লবণ দিয়ে খেয়ে নিলাম। বাকিটা তুমি চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করে খেয়ো!’