কলাবউ আসলে কি? দুর্গাপুজোয় নবপত্রিকা স্নান কেন করানো হয়

কলাবউ আসলে কি? দুর্গাপুজোয় নবপত্রিকা স্নান কেন করানো হয়
নবপত্রিকা স্নান

দুর্গা পূজামণ্ডপে অবাক হয়ে দেখতাম গণেশের ডানদিকে একটা কলাগাছ শাড়ি পরে ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কলাবউ। দুর্গাপূজা শুরুই হত ওই কলাবউ স্নান অনুষ্ঠান দিয়েই। অনেক পরে জেনেছি ওই কলাবউ স্নানই হচ্ছে নবপত্রিকা স্নান। তাহলে কলাবউ আসলে কি?

দুর্গাপুজোয় সপ্তমীর অনুষ্ঠান শুরু হয় নবপত্রিকা বা কলাবউকে স্নান করানোর মাধ্যমে। মহা সপ্তমীর ভোরে দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে নবপত্রিকার নটি গাছকে শ্বেত অপরাজিতার লতা ও ন গাছা হলুদ সুতোয় বেঁধে স্নান করাতে নিয়ে যেতে হয়। সপ্তমী থেকে দশমী, এই চার দিন তাঁরও পুজো হয়। নবপত্রিকার বিসর্জনেও আলাদা নিয়ম রয়েছে।

নবপত্রিকা - নয়টি উদ্ভিদ
নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ

তাহলে, কী এই নবপত্রিকা? এই নবপত্রিকা আসলে নয়টি গাছের সমষ্টি, গণেশের বউ নয়। কিন্তু কেন এই নয়টি গাছকেই বেছে নেওয়া হয়েছে? পুরাণ মতে এই নয়টি গাছেই দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপ বিরাজ করে। যেমন কলা গাছে দেবী ব্রহ্মানী, কচু গাছে দেবী কালিকা, হলুদ গাছে দেবী উমা, জয়ন্তী গাছে দেবী কার্তিকী, বেল গাছে দেবী শিবা, ডালিম গাছে দেবী রক্তদন্তিকা, অশোক গাছে দেবী শকরহিতা, মানকচু গাছে দেবী চামুন্ডা এবং ধান গাছে দেবী লক্ষ্মী। সপ্তমীর আগে দেবীর চামুন্ডা রূপ পূজিত হলেও দেবীর বাকি রূপগুলো আলাদা করে পূজিত হয়না।

আরও পড়ুন: সত্যেন্দ্রনাথ বসু – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা

ছোট থেকে জেনে আসা এই কলাবউ আদতেই গণেশের বউ নয়। প্রাচীনকাল থেকে পূজিত হওয়া এই নবপত্রিকা কালক্রমে মিশে গেছে দুর্গাপুজোর বাকি নিয়মের সাথে। এর থেকেই বোঝা যায় পৃথিবীর প্রতিটা শস্যে, প্রতিটা স্থানে বিরাজ করেন মা দুর্গা। মা দুর্গার আরাধনায় আসলে আমরা আমাদের আদি মাতা পৃথিবীরই আরাধনা করে থাকি প্রতি বছর।

হিন্দু লোকাচারে স্ত্রী থাকেন স্বামীর বাঁ দিকে। কিন্তু, নবপত্রিকা থাকে গণেশের ডান দিকে। গবেষকরা মনে করেন, নবপত্রিকার পূজা আসলে শস্যদেবীর পূজা। যেখানে শস্যকেই বধূরূপে দেবীর প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়। আর, সেই থেকেই এসেছে কলাবউ স্নানের প্রথা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top