চিরকালই ছোট নৈতিক গল্প নৈতিক শিক্ষাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে। সেই উদ্দেশ্যে 6 টি বাছাই করা, ছোট নৈতিক গল্প দেওয়া হল।
শিশুদের নীতির পাঠ শেখানোর ক্ষেত্রে ছোট গল্প একটি ভাল উপায়। ছোটগল্প নৈতিক শিক্ষাকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলে । শিশুরা নৈতিক পাঠের সাথে আরও বেশি সম্পর্কযুক্ত হতে পারে যদি নৈতিকতাকে গল্প হিসাবে সরবরাহ করা হয়। তাই তাদের নিয়মানুবর্তিতা বোঝানোর চেষ্টা করার পরিবর্তে যদি আমরা নিয়মানুবর্তিতা সম্পর্কে তাদের একটি গল্প বলি, তাহলে গল্পের মাধ্যমে পাঠটি আরও পরিষ্কার হয়। গল্পে নিয়মানুবর্তিতার ইতিবাচক প্রভাব এবং সম্ভবত নিয়মনিষ্ঠ না হওয়ার খারাপ প্রভাবগুলি ব্যাখ্যা করা সহজ হয় । এছাড়াও বাচ্চারা ছোটগল্প পছন্দ করে। স্ক্রীন মুক্ত পরিবেশে বাচ্চাদের সাথে কিছু সময় কাটানোর জন্য এটি একটি ভাল উপায়।
1. সূঁচ গাছ – নৈতিক গল্প : Needle tree – a moral story
একবার দুই ভাই বনের প্রান্তে বসবাস করত। বড় ভাই তার ছোট ভাইয়ের প্রতি খুব নীচ মনোভাব জ্ঞাপন করত এবং সমস্ত খাবার খেয়ে ফেলতো ও তার সমস্ত ভাল কাপড় নিয়ে নিত। একদিন, বড় ভাই বাজারে বিক্রি করার জন্য কিছু কাঠের সন্ধানে বনে গিয়েছিল। সে বৃক্ষের পরে বৃক্ষের ডালপালা কাটতে কাটতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে, একটি যাদুকর সূঁচ গাছের মনে এল। সূঁচ গাছটি তাকে বলল, ‘ওহে মহাশয়, দয়া করে আমার শাখা কাটবেন না। আপনি যদি আমাকে ছেড়ে দেন, আমি আপনাকে আমার সোনার আপেল দেব।
বড় ভাই রাজি হল কিন্তু গাছ যে কটা আপেল দিল তাতে সে হতাশ হল। সে লোভে কাবু হয়ে গেল, এবং সূঁচ গাছকে হুমকি দিল যে আরো আপেল না দিলে সে গোড়া থেকে গাছটি কেটে ফেলবে। তার পরিবর্তে গাছটি বড় ভাইয়ের উপর শত শত ক্ষুদ্র সূঁচ বর্ষণ করল। যখন সূর্য দিগন্তের নিচে নেমে গেল, বড় ভাই বেদনায় মাটির উপর শুয়ে পড়ল।
ছোট ভাই চিন্তিত হয়ে বড় ভাইয়ের সন্ধানে গেল। সে তাকে চামড়ার উপর শত শত সূঁচ ফোটা অবস্থায় দেখতে পেল। সে তার ভাইয়ের কাছে দৌড়ে গেল এবং যন্ত্রনা সহ্য করেও ভালোবাসার সাথে প্রতিটি সূঁচ তুলে ফেলল। শেষ হওয়ার পর, বড় ভাই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার জন্য ক্ষমা চাইল এবং এবার থেকে ভালো হওয়ার অঙ্গীকার করল। সূঁচ গাছটি বড় ভাইয়ের অন্তরের পরিবর্তন দেখল এবং তাদের যত সোনার আপেলের প্রয়োজন ছিল সব দিল।
শিক্ষা: সদয় এবং ক্ষমাশীল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটির জন্য সবসময় পুরস্কৃত করা হবে।
আরও পড়ুন: রহস্যময় কৈলাশ পর্বত আজও কেন অজেয় রয়েছে
2. কৃপণ ও তার সোনা : নীতিশীক্ষমূলক ছোটগল্প
একবার এক বৃদ্ধ কৃপণ ছিল সে একলা একটা বাগান সহ একটি বাড়িতে বাস করত। বৃদ্ধ কৃপণ তার সমস্ত স্বর্ণমুদ্রা তার বাগানের এক জায়গায় পাথরের নিচে লুকিয়ে রাখতেন।
প্রতি রাতে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে, বৃদ্ধ কৃপণ তার মুদ্রা গুনতে তার বাগানে বেরিয়ে যেতেন। তিনি প্রতিদিন একই রুটিন চালিয়ে যেতেন কিন্তু তিনি কখনও একটি স্বর্ণমুদ্রাও খরচ করতেন না ।
একদিন এক চোর বৃদ্ধ কৃপণকে তার মুদ্রা লুকিয়ে রাখতে দেখল। যেই বৃদ্ধ কৃপণ তার ঘরে ফিরে গেল, চোর লুকিয়ে গিয়ে সমস্ত সোনা নিয়ে গেল।
পরের দিন, কৃপণ লোকটি যখন তার মুদ্রা গুনতে বেরিয়েছিল, সে স্বর্ণমুদ্রগুলি দেখতে না পেয়ে জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করল । তার প্রতিবেশীর তার কান্না শুনে দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। সবকিছু সোনার পর, এক প্রতিবেশী জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন আপনি শুধু আপনার বাড়ির ভিতরেই অর্থ লুকননি, ঘরই নিরাপদ জায়গা ছিল তো ?”
প্রতিবেশী আরও বলেছিল, “তাছাড়া ঘরের ভিতরে থাকলে আপনার কিছু কেনার প্রয়োজন হলে মুদ্রা নেওয়াও সহজ হত।”
“কিছু কেনার প্রয়োজন ?” কৃপণ উত্তর দিল, “আমি কখনই আমার সোনা খরচ করব না।”
একথা শুনে প্রতিবেশী একটি পাথর ছুঁড়ে। তারপর, বলল “যদি তাই হয়, তবে পাথরের টুকরোটা লুকিয়ে রাখুন । এটা আপনার হারিয়ে যাওয়া সোনার মতো মূল্যহীন।”
নীতিকথা : কোন জিনিষ কাছে থাকা ততটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিক যতটা তার প্রয়োজনীয়তা আছে ।
3. সোনার স্পর্শ : একটি আদর্শ নৈতিক গল্প
এটি একটি খুব লোভী ধনী মানুষের গল্প, যে একটি পরীর দেখা পেয়েছিল। পরীর চুল কিছু গাছের শাখায় আটকে যায়। তাঁর আরো অর্থ উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে বুঝতে পারে, তিনি পরীকে সাহায্য করার বদলে তার একটি ইচ্ছা পূরণ করতে বললেন। তিনি বললেন, ‘যা আমি স্পর্শ করব তা–ই যেন সোনা হয়ে যায়‘, এবং তার এই ইচ্ছা কৃতজ্ঞ পরী মেনে নিল।
লোভী লোকটি তার স্ত্রী ও মেয়েকে তার নতুন পাওয়া বড় অর্থাৎ সোনার স্পর্শ সম্পর্কে বলার জন্য বাড়িতে ছুটলেন, পথে সব পাথর ও নুড়ি স্পর্শ করে সোনায় রূপান্তরিত করতে করতে চললেন। বাড়ি ফেরার পর তাঁর মেয়েটি তাঁকে অভিবাদন করার জন্য দৌড়ে এল। যেই তিনি ঝুঁকে তাকে কোলে নিলেন, সে একটি সোনার মূর্তিতে পরিণত হল। তিনি তাঁর মূর্খতা বুঝতে পারলেন এবং তাঁর বাকি দিনগুলোতে তার ইচ্ছাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পরীর অনুসন্ধান করেছিলেন।
শিক্ষা: লোভ সবসময় পতন ডেকে আনে।
আরও পড়ুন: বোধিসত্ত্ব বা জাতকের গল্প – অপূর্ব নীতিশিক্ষামূলক গল্পমালা
4. বুদ্ধি খাটিয়ে গণনা : বুদ্ধিদীপ্ত বীরবলের ছোটগল্প
একবার আকবর তার আদালতে একটি প্রশ্ন রেখেছিলেন যা সবাই কে অবাক করেছিল । রাজসভার সবাই যখন উত্তর বের করার চেষ্টা করছিল তখন বীরবল এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলেন কি ব্যাপার। আর তাই তারা বিরবলকে প্রশ্নটি করে জানতে চাইল ,
“শহরে কতগুলো কাক আছে ?’
বীরবল সাথে সাথেই হাস্য বদনে আকবরের কাছে গিয়ে ঘোষণা করলেন যে তাঁর প্রশ্নের উত্তর হল, একুশ হাজার পাঁচশো তেইশটি কাক গোটা শহরে উপস্থিত। যখন সম্রাট জানতে চাইলেন যে বীরবল কিভাবে উত্তরটি দিতে পারলেন, তখন বীরবল উত্তরে বলেছিলেন , ‘ মহারাজ ,আপনার লোকেদের কাকেদের সংখ্যা গণনা করতে বলুন।
যদি আরো কাক থাকে, তাহলে শহরের বাইরে থেকে কাকেদের আত্মীয়রা তাদের দেখা করতে এসেছে অর যদি কম থাকে, তাহলে কাকেরা শহরের বাইরে তাদের আত্মীয়–স্বজনের সাথে দেখা করতে গেছে। ‘ উত্তর পেয়ে খুশী হয়ে, আকবর বীরবলকে পুরস্কৃত করেছিলেন।
শিক্ষা: প্রত্যেক উত্তরেরই একটি সঠিক ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন।
5. গর্বিত গোলাপ : একটি ছোট্ট নৈতিক গল্প
একসময় একটি গোলাপ ছিল যে তার সুন্দর চেহারা নিয়ে গর্বিত ছিল। তার একমাত্র হতাশা ছিল যে সে কুৎসিত ক্যাকটাসের পাশে বেড়ে উঠেছিল। প্রতিদিন, গর্বিত গোলাপ ক্যাকটাসকে তার চেহারা নিয়ে অপমান করত, কিন্তু ক্যাকটাস চুপ করে থাকত। বাগানের অন্যান্য সমস্ত গাছপালা গোলাপকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সে তার নিজের ভালো চেহারা নিয়ে খুব প্রভাবিত ছিল।
এক গ্রীষ্মে, বাগানে উপস্থিত কুয়োটি শুকিয়ে গেল এবং গাছগুলির জন্য জল রইল না। গর্বিত গোলাপ নিস্তেজ হতে শুরু করল। সে দেখল একটি চড়ুই ক্যাকটাসের মধ্যে ঠোঁট ডুবিয়ে জল খাওয়ার চেষ্টা করছে। লজ্জিত হলেও, সে ক্যাকটাসকে জিজ্ঞেস করল, যদি সেও কিছু জল পেতে পারে। সদয় ক্যাকটাস সহজেই সম্মত হল এবং তারা উভয়ই কঠিন গ্রীষ্ম বন্ধু হিসাবে পার করে দিল।
শিক্ষা: চেহারা দিয়ে কাউকে বিচার করবে না।
6. লোভী কুকুর : আদর্শ নীতিশিক্ষামূলক গল্প
একদিন একটি লোভী কুকুর একটি কসাই – এর দোকান থেকে এক টুকরো মাংস চুরি করল। তা দেখে কসাই তাঁর পিছনে তাড়া করল কিন্তু কিছুদূর পর্যন্ত গিয়ে সে তার নিজের দোকানে ফিরে এল। এদিকে কুকুরটা ভীষণ ভয়ে ছুটতে লাগল প্রাণপণে।
অনেকটা যাওয়ার পর সে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল যে কসাইটা তার দিকে তাড়া করে আসছে কিনা। কাউকে আসতে না দেখে সে তার গতি কমিয়ে ধীরে সুস্থে হাঁটতে লাগল।কিছুক্ষণ পরে সে এসে পৌঁছল একটা ছোট্ট নদীর কাছে।
সে তখন মুখের মাংসের টুকরোটা নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে নদী পার হতে লাগল ।সেসময় নদীর পরিষ্কার জলে তার প্রতিবিম্ব ভেসে উঠতে সে সেদিকে তাকিয়ে দেখল। বোকা আর লোভী কুকুরটা নিজের প্রতিবিম্বকে মাংস মুখে অন্য একটি কুকুর মনে করল।সেই মাংসের টুকরোটাও পাওয়ার জন্য তার খুব লোভ হলো।
সে এবার অন্য কিছু চিন্তা ভাবনা না করে নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল আর সঙ্গে সঙ্গে জলের স্রোত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। লোভী কুকুরটা মাংসের টুকরোটার সাথে সাথে তার মূল্যবান প্রাণ টা ও হারাল।
শিক্ষা: অতিরিক্ত লোভ মানুষের সর্বনাশের কারন।