১২৭৩ বঙ্গাব্দের ১৭ আশ্বিন (ইংরেজি ২ অক্টোবর ১৮৬৬) কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম রসিকলাল চন্দ ও মা নয়নতারা। তাঁর নাম রাখা হয় কালীপ্রসাদ। প্রথমে একটি সংস্কৃত বিদ্যালয়ে তিনি পড়েছিলেন ও পরে ১৮ বছর বয়সে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন।
ছেলেবেলা থেকেই ধর্মে তাঁর প্রগাঢ় অনুরাগ ছিল। যৌবনের শুরুতে হিন্দুশাস্ত্রাদি পাঠের সঙ্গে সঙ্গে রেভারেণ্ড ম্যাকডোরেণ্ড, রেভারেণ্ড কালীচরণ বন্দোপাধ্যায় প্রভৃতি কর্তৃক প্রচারিত খ্রীষ্টধর্মের প্রতিও আকৃষ্ট হন। কেশবচন্দ্র সেন, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার প্রভৃতির বক্তৃতা এবং পণ্ডিত শশধর তর্কচূড়ামণির ষড়দর্শনের আলোচনা তাঁর মনে গভীর রেখাপাত করে। তদানীন্তন সুবিখ্যাত পণ্ডিত কালীবর বেদান্তবাগীশের কাছে পতঞ্জলির যোগসুত্র পড়ে তাঁর মন হঠযোগ ও রাজযোগ সাধনা করে নির্বিকল্প সমাধিতে আত্মসমাহিত থাকবার জন্য উন্মুখ হয়। তিনি একজন সিদ্ধ যোগীগুরুর অন্বেষণ করতে গিয়ে সহপাঠী যজ্ঞেশ্বর ভট্টাচার্যের কাছে দক্ষিণেশ্বর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বিষয়ে জানতে পারেন। ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণর দেখা পেলেন। পরমহংসদেব অভেদানন্দকে নানান প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে বললেন, ‘পূর্বজন্মে তুমি যোগী ছিলে, একটু বাকি ছিল, এই তোমার শেষ জন্ম’।
১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের তিরোধানের পর স্বামী অভেদানন্দ কমণ্ডুল, ভিক্ষাপাত্র ও সামান্য বহির্বাসমাত্র সম্বল করে খালি পায়ে হিমালয় থেকে কুমারিকা পর্যন্ত ভারতের তীর্থস্থান ও নগরাদি পরিভ্রমণ করেন। ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দের আগস্ট মাসে লণ্ডন থেকে তাঁর গুরুভাই স্বামী বিবেকানন্দের কাছ থেকে ডাক পেয়ে তিনি লণ্ডন যাত্রা করেন এবং নিয়মিতভাবে রাজযোগ, জ্ঞানযোগ ও বেদান্ত সম্বন্ধে বক্তৃতাদি দিতে থাকেন। ঐ সময়ে ম্যাক্সমুলার, পল ও ডয়সন প্রভৃতি পাশ্চাত্ত্য মনীষীদের সঙ্গে তিনি পরিচিত হন।
১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দের নির্দেশে তিনি আমেরিকায় যান ও নিউ-ইয়র্কে বেদান্ত আশ্রমের ভার গ্রহণ করেন। সেখানে গীতা, উপনিষদ, সাংখ্য, পাতঞ্জল প্রভৃতি ছাড়াও বিচিত্র বিষয় সম্বন্ধে তিনি বক্তৃতা দান করেন। ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকার বিখ্যাত দার্শনিক উইলিয়াম জেমসের সঙ্গে তাঁর ‘বহুত্বের মধ্যে একত্ব’ সম্বন্ধে বিস্তর আলোচনা হয়। ইংরেজি ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে স্বামী অভেদানন্দ একবার ভারতে ফেরেন ও কিছুদিনের মধ্যেই আবার আমেরিকায় ফিরে যান। তিনি ইউনাইটেড স্টেটস, কানাডা, আলাস্কা, মেক্সিকো, জাপান, হংকং, ক্যান্টন, ম্যানিলা প্রভৃতি শহরে ভারতের ধর্ম ও দর্শন সম্বন্ধে বক্তৃতা করেন। অবশেষে ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে আমেরিকা ছাড়েন আর হনুলুলুতে অনুষ্ঠিত প্যান প্যাসিফিক শিক্ষা সম্মেলনে যোগদান করে সেপ্টেম্বর মাসে ভারতে ফেরত আসেন।
১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে স্বামী অভেদানন্দ কাশ্মীর হয়ে তিব্বত যাত্রা করে লাদাকের বৌদ্ধ মন্দির হেমিসগুম্ফা পরিদর্শন করেন। সেখান থেকে যীশুখ্রীষ্টের অজ্ঞাত জীবনীর কতকাংশ উদ্ধার করে তাঁর ‘কাশ্মীর ও তিব্বতে’ গ্রন্থে প্রকাশ করেন। ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় ফিরে তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। কর্মবহুল ও দেশ ও দশের কল্যাণে উদযাপিত তাঁর জ্ঞানদীপ্ত জীবনের অবসান ঘটে ১৯৩৯ খ্রীষ্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতার শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ।