অদ্ভুত ব্যাঙ আর বন্দি মেয়ে: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু’ র লোককথা

অদ্ভুত ব্যাঙ আর বন্দি মেয়ে গল্পটি দক্ষিণ অমেরিকার দেশ পেরু’র একটি লোককথা, যা অপরকে সাহায্য করা ও নিজেকে ভালোবাসার গুরুত্ব বোঝায় আমাদের
অদ্ভুত ব্যাঙ আর বন্দি মেয়ে

আন্দিজ পর্বতের ঠান্ডা ঝর্ণার কাছে একটা ছোট্ট ব্যাঙ বাস করত। ব্যাঙটার দুই পায়ের মাঝে এক অদ্ভুত পার্থক্য ছিল—ডান পা বাম পায়ের থেকে অনেক লম্বা।

ব্যাঙটা যখন জলে নিজের ছায়া দেখত, দুঃখ করে বলত, “ইশ! যদি আমার ভাই-বোনদের মতো সুন্দর দুই পা থাকত!” এই ভেবে সে কেঁদে ফেলত। আর নিজের ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে বা মিশতে যেত না, একা একা থাকত।

এদিকে, পাহাড়ের উঁচুতে এক গুহায় থাকত এক মেয়ে। মেয়েটার নাম ছিল তারা, যার মানে “ভোরের তারা”। কিন্তু সে গুহায় নিজের ইচ্ছায় থাকত না। তাকে বন্দি করে রেখে ছিল বিশাল এক শকুন, যার নাম শকু। মেয়েটি পাহাড়ের নিচের মাঠে নদীর পাড়ে ভেড়া চরাত। একদিন শকু তাকে ছোঁ মেরে উড়িয়ে নিয়ে আসে এই উচু গুহায়। এই কনডরের অর্থাৎ শকু’র ডানার মাপই ১০ ফুটেরও বেশি।

শকু মেয়েটাকে তার খাবারের ব্যবস্থা করতে আর ভিকুনা (মানে এক ধরনের লামা) চামড়া দিয়ে বিছানা বানাতে বাধ্য করত। মেয়েটা গুহা থেকে বেরোতেই পারত না, কারণ ওই শকু তাকে নজরে রাখত।

একদিন, ব্যাঙটি দূর থেকে শকুকে অনেক দূরে উড়তে দেখে ভাবল, “চল দেখি, শকু’র বাসাটা কেমন!” সে তার অদ্ভুত লম্বা পা নিয়েও পাহাড়ে উঠে গুহায় পৌঁছল। সেখানে গুহার ভিতর থেকে শুনল মেয়েটা বলছে:

“আমাকে একটু ঝর্ণায় যেতে দাও, জামাকাপড় ধুতে হবে।”
শকু রেগে বলল, “না! তুমি পালানোর চেষ্টা করবে।”
তারা বোঝানোর চেষ্টা করল, “আমি পালাতে পারব না, আমি কাপড় পাথরে মারার (মানে কাপড় কাচার) আওয়াজ করলে তুমি বুঝতে পারবে আমি এখানেই আছি।”

এটা শুনে ব্যাঙের মনে একটা বুদ্ধি এল। সে নিচে নেমে মেয়েটার সঙ্গে দেখা করল।
“কেঁদো না,” বলল ব্যাঙটা।
তারা অবাক হয়ে বলল, “তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?”

ব্যাঙ বলল, “হ্যাঁ, আমি জাদু জানি। আমি তোমার রূপ ধারণ করে কাপড় থোপাতে থাকব, আর তুমি পালিয়ে যাবে!”
তারা খুশিতে ব্যাঙের কপালে চুমু খেল। ব্যাঙটা সেই মুহূর্তেই তারার মতো হয়ে গেল।

তারা ছুটে পালিয়ে গেল। ব্যাঙ তার রূপ ধরে কাপড় মারতে থাকল। শকু কিছুক্ষণ পর এসে চিৎকার করল, “তুমি গুহায় ফিরে এসো!” কিন্তু ব্যাঙটা কিছু না বলে জলের স্রোতে ঝাঁপ দিল। শকু আর কিছু বুঝতে পারল না।

তারা মুক্ত হয়ে তার বাড়ি ফিরে গেল। আর সেই ছোট্ট ব্যাঙ? তার কপালে তারা চুমু খেয়েছিল, সেখানে এখন এক উজ্জ্বল তারার মতো রত্ন ঝলমল করছে।

সেই থেকে, ব্যাঙটা আর তার নিজের ছায়াকে ভয় পায় না। সে গর্ব করে বলে, “আমি বিশেষ, আমিই অনন্য!”

অদ্ভুত ব্যাঙ আর বন্দি মেয়ে – গল্পটি অন্যকে সাহায্য করতে ও নিজেকে ভালোবাসতে শেখায়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top