ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক নীতি গল্প: 7 moral stories for young

ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক নীতি গল্প যেকোন সময়েরই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই বিভিন্ন ভাষা থেকে এই নীতি গল্পগুলি চয়ন করা হয়েছে। সংকলন সম্পর্কে যেকোনো মতামত আমাদের আরও উত্সাহিত করবে।

ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক নীতি গল্প: 7 moral stories for young

ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক নীতি গল্প : বাছাই করা 7 টি নিচে দেওয়া হল।

1. রাজহাঁস আর কাক – Swan and Crow story

রাজহাঁস আর কাক
Picture credit: blogspot.com

একটা কাক ও রাজহাঁসের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল। রাজহাঁসকে দেখেকাক একদিন দুঃখ করে বলল—তুমি কী সুন্দর দেখতে!

তোমার গায়ের রং কী ধপধপে সাদা। আমিও যদি তোমার মতো সাদা হতে পারতাম! আমার রং কালো, তাই কী বিচ্ছিরিই না দেখতে আমি।

কাক ভেবেছিল যে, রাজহাঁস জলে থাকে বলেই হয়তো তার গায়ের সব ময়লা ধুয়ে ধুয়ে ফরসা হয়ে গেছে। যেই না ভাবা অমনি তার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল।

কাকটিও জলে নেমে পড়ল, তারপর জলে বার কয়েক ডুব দিয়ে সে পাড়ে উঠে এল। কিন্তু দেহের দিকে তাকিয়ে কাক দেখল সে যেমন আগে কালো ছিল এখনও তেমনি কালো রয়ে গেছে।

তারপর কাকের মনে হল শুধু জলে নামলেই হবে না, ওই জলেই তাকে বাস করতে হবে। এই ভেবে সে দিনরাত জলেই থাকতে লাগল।

কাক যত দিন ডাঙায় ছিল এখানে ওখানে উড়ে গিয়ে কিছু না কিছু খাবার জোগাড় করতে পারত— কিন্তু জলের মধ্যে তো কাকের খাবার পাওয়া যায় না। খিদে পাওয়া সত্ত্বেও কাক জেদ করে জলে বসে থাকত। এদিকে না খেয়ে না খেয়ে সে দিন দিন রোগা হয়ে যেতে লাগল। রাজহাঁস তাকে ফরসা হবার বৃথা চেষ্টা না করতে বলল, কিন্তু কাক রাজহাঁসের কথা শুনল না। সে রাজহাঁসের মতো সাদা হবার চেষ্টা করে যেতে লাগল। এমনি করে জলে থেকে থেকে কাক সাদা হওয়া তো দূরের কথা—না খেয়ে খেয়ে দুর্বল হয়ে একদিন মারাই গেল।

নীতি : প্রকৃতিকে মেনে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

2. স্বার্থপর ঘোড়া ও তার পরিণতি

স্বার্থপর ঘোড়া ও তার পরিণতি

একটি লোক একদিন একটা ঘোড়া আর একটা গাধা নিয়ে রাস্তা এ | দিয়ে যাচ্ছিল। গাধার পিঠে ছিল মস্ত বড়ো দুটো বোঝা। সে আর বইতে পারছিল না। তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। সে তখন ঘোড়াকে বলল, ভাই, আমি যে আর চলতে পারছি না, তুমি বোঝার কিছুটা মাল তোমার পিঠে নাও ।

ঘোড়া তাতে রাজি হল না।

একটু পরেই বোঝার ভার সইতেনা পেরে গাধাটা পথের মাঝখানে মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে মারা গেল। লোকটি তখন গাধা যে বোঝা বইছিল তা তো ঘোড়ার পিঠে চাপালই, এমনকি মরা গাধার ছাল ছাড়িয়ে সেটাও ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে দিল।

এবার ভারের চোটে ঘোড়া কোঁকাতে কোঁকাতে করুণ সুরে বিলাপ করে বলতে লাগল—আমার দুর্মতির জন্যেই আজ এই দশা হয়েছে।

গাধার বোঝার খানিকটা আমি বইতে রাজি হইনি, তাই এখন তার পুরো বোঝা—এমনকি তার চামড়া পর্যন্তও আমাকে বইতে হচ্ছে।

নীতি : স্বল্প দায়িত্ব স্বেচ্ছায় গ্রহণ করলে, বড়ো দায়িত্ব থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: চালাক মাকড়সা আনান্সির গল্প – ঘানা’র পৌরাণিক গল্প

3. অতি চালাকের গলায় দড়ি

একবার এক গাধা আর শেয়ালের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হয়েছিল। দুই বন্ধু একদিন শিকার করতে গেল। কিছু দূর যাবার পর সামনে এক সিংহ দেখতে পেয়ে বিপদ বুঝে শেয়ালটা নিজেকে বাঁচাবার জন্যে সিংহের একেবারে কাছে গিয়ে বলল – মহারাজাধিরাজ যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি। তারপর ফিসফিস করে বলল— ওই গাধাটাকে আপনার একেবারে হাতের মুঠোর মধ্যে এনে দিতে পারি। তবে কথা দিতে হবে আমাকে ছেড়ে দেবেন।

সিংহ বলল—বেশ তো, তাই হবে। কথা দিচ্ছি আমি।

সিংহের এই কথা শুনে শেয়াল গাধাটাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে সিংহের কাছাকাছি একটা ফাঁদের মধ্যে ফেলল।

আর এদিকে সিংহ যখন দেখল গাধাটার আর পালাবার কোনো উপায় নেই তখন প্রথমেই শেয়ালটাকে শেষ করল, তারপর ধীরে সুস্থে গেল গাধাটার কাছে।

নীতি : অন্যের সর্বনাশের চেষ্টা করলে নিজেরই ক্ষতি হয়। ( অর্থাৎ অতি চালাকের গলায় দড়ি )

4. শকুন, সিংহ আর শূকর

শকুন, সিংহ ও শূকর
Picture credit: pinterest

এক বনে এক সিংহ বাস করত। সেখানে অন্যান্য প্রাণীরাও থাকত। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম পড়ল। চারিদিকে কোথাও একটুও জল নেই। জঙ্গলের গাছেরা সব শুকিয়ে যেতে লাগল। কোথাও কোথাও মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেল। আকাশে মেঘের দেখা নেই। চারিদিকে প্রচণ্ড গরম হাওয়া বইছিল।

বনের প্রাণীরা খাবার জলের খোঁজে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। জঙ্গল থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা ছোট্ট ঝরনা ছিল। একটি শুকর একদিন সেই ঝরনাটির সন্ধান পেল। তৃষ্ণার্ত শূকরটি মনের আনন্দে সেই ছোট্ট ঝরনার দিকে এগিয়ে গেল। আর যেই-না ঝরনার জলে সে মুখ দিতে গেল, অমনি সে দেখতে পেল ঝরনার জল যেখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে এবং সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে তার উলটোদিক থেকে একটি সিংহ এই ঝরনাতেই জল খেতে আসছে। ক্রমে সে আরও কাছে এল। সিংহের ভীষণ রাগ হল।

সে হচ্ছে বনের রাজা। তার আগে শূকরটা জল খাবে! কিছুতেই তা হতে পারে না। তাকে সে কিছুতেই এই ঝরনার জল খেতে দেবে না। তা ছাড়া বনের রাজা সে। রাজার সঙ্গে একই জল কেউ খেতে পারে? অতএব জল খাওয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রচণ্ড ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। প্রথমে কথা কাটাকাটি, পরে হাতাহাতি বেঁধে গেল। সে এক ভীষণ লড়াই। অনেকক্ষণ ধরে সেই লড়াই চলল। কেউই কাউকে হারাতে পারছিল না। সিংহ আর শূকর লড়াই করতে করতে দুজনেই হাঁপিয়ে গিয়েছিল।

তাই একটু হাঁফ ছেড়ে নিতে উভয়েই লক্ষ করল যে, কোন্ ফাঁকে এক শকুনি তাদের থেকে একটু দূরে বসে অপেক্ষা করছে। কে আগে মরে। মরলেই শকুনি তার মাংস খাবে। এই দেখে সিংহ আর শূকর একটু ঘাবড়ে গেল। শকুনের পেটে যাওয়ার চেয়ে ঝগড়া বন্ধ করাই ভালো, ঝগড়া করে আমাদের কারোরই লাভ হবে না। মাঝখান থেকে শকুনেরই লাভ হবে। তারা একটু থেমে কী যেন ভাবতে লাগল। শকুনিকে দেখে ওদের দুজনেরই মাথায় বুদ্ধি খুলে গেল। তারা স্থির করল আর ঝগড়া নয়

অতএব সিংহ শূকরকে প্রস্তাব দিল—ভাই, আমরা ঝগড়া করব না। মারামারি করে আমরা যদি মারা যাই তবে ওই শকুনেরই লাভ হবে। আমাদের সে তখন ঠুকরে ঠুকরে খাবে। সেটি আমরা কিছুতেই হতে দেব না। তার চেয়ে, ভাই শূকর, এসো আমরা বিবাদ মিটিয়ে নিই। তুমি তো আগে ঝরনার জল খেতে এসেছিলে, তাই তুমি ভাই আগে জল পান করো। আমি পরে এসেছি, তাই আমি পরে জল পান করব।

শূকরটি সিংহকে বলল – আপনি রাজার মতোই আচরণ করলেন। তাই আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। আপনি বনের রাজা। রাজাকে সম্মান জানাতে হয়। তাই আমার অনুরোধ রাজা হিসেবে আপনি প্রথমে জল পান করুন, তারপর আমি আপনার প্রসাদ গ্রহণ করব। সিংহ আর শূকর এইভাবে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মিটিয়ে নেওয়ায় শকুনটি ভাবল, আর এখানে অপেক্ষা করে কোনো লাভ নেই, আজ তার কপাল মন্দ ৷ এইসব ভেবে আর একটুও অপেক্ষা না করে শকুনটি উড়ে অন্য জায়গায় চলে গেল।

নীতি : দুজনের কলহে তৃতীয় জনেরই লাভ।

আরও পড়ুন: চু কোই ও বট গাছের গল্প – ভিয়েতনামের রূপকথা

5. গাধা আর ঘোড়া

একটা গাধা ভারী বোঝা পিঠে নিয়ে অতি কষ্টে পথ চলেছে, এমন সময় এক লড়াইয়ের ঘোড়া খটখট করে সেই পথে এসে গাধাকে বলল—এই গাধা, তাড়াতাড়ি পথ ছেড়ে দে আমায়, নাহলে এক লাথিতে তোকে শেষ করে দেব।

গাধাটি ঘোড়ার হুমকি শুনে তখনই তাকে পথ ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়াল আর নিজের দুর্ভাগ্যের জন্যে মনে মনে দুঃখ করতে লাগল। কিছুদিন পরে ওই ঘোড়াটি যুদ্ধ থেকে এমন আহত হয়ে ফিরল যে তাকে দিয়ে আর যুদ্ধের কাজ হল না। এমনকি তার ওপরে আর চড়াও চলল না। তখন ঘোড়ার মালিক তাকে জমিতে চাষবাসের কাজে লাঙল টানতে লাগিয়ে দিল।

একদিন দুপুরে প্রচণ্ড গরমে রোদে ঘোড়া লাঙল টানছিল, গা দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছিল। আর ঘোড়াটা চলতে একটু ঢিলে দিলেই তার পিঠে পড়ছিল চাবুকের বাড়ি। সেই সময় গাধাটা পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।

ঘোড়াটাকে সে এই অবস্থায় দেখে নিজের মনে মনে বলতে লাগল, আরে কপাল, একেই তো একদিন আমি ঈর্ষা করেছিলাম ওর সৌভাগ্যের জন্যে আর এখন তো ওর অবস্থা দেখে চোখে জল আসছে। আহা বেচারা! মূর্খ, নিজের সৌভাগ্যের সময় অকারণে আমাকে অপমান করেছিল। এখন তো এর অবস্থা আমার চাইতেও শোচনীয়।

নীতি : সৌভাগ্য কারও চিরকাল থাকে না।

6. জ্যোতির্বিদ

এক দেশে এক জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তার কাজ, রোজ রাতে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখা। একদিন রাত্রে সেই জ্যোতির্বিদ তারা দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক হয়ে পথ চলছিলেন। পথে যেতে যেতে তিনি হঠাৎ একটা কুয়োর মধ্যে পড়ে গেলেন। তারপর তিনি—কে কোথায় আছ শিগগির এসে আমায় কুয়ো থেকে তুলে বাঁচাও, বলে চিৎকার করতে লাগলেন। তার পাশ দিয়ে এক পথিক যাচ্ছিল। চিৎকার শুনে পথিকটি কুয়োর কাছে এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কী করে কুয়োর ভেতরে হঠাৎ পড়ে গেলেন?

জ্যোতির্বিদ তার উত্তরে নিজের কুয়োতে পড়বার কারণ যখন জানালেন তখন পথিকটি বলল “কী আশ্চর্য জ্যোতির্বিদ নিজে আপনি যে পথে চলেন, তার কোথায় কী আছে তারই খোঁজ রাখেন না, অথচ আকাশের কোথায় কী আছে তা জানবার জন্যে আপনি এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন”।

নীতি : নিজের পরিবেশ না জেনে দুনিয়ার খবর নেওয়া অর্থহীন।

7. বোকা পায়রার গল্প

বোকা পায়রার গল্প
Picture credit: sawmillriveraudubon.org

এক বনে একটা হিংস্র চিল ছিল। সেখানে অনেক পায়রাও বাস করত। পায়রাগুলির সঙ্গে চিলের ছিল দারুণ শত্রুতা। ওই চিলের ভয়ে পায়রাগুলো তাদের বাসা ছেড়ে বের হতে পারত না, তাই চিলও তাদের কিছু করতে পারত না।

একদিন সেই দুষ্টু চিল মনে মনে এক ফন্দি এঁটে পায়রাদের কাছে গিয়ে বলল—কোনো ভয় নেই তোমাদের, আমার কথা শোনো। মিছিমিছি তোমরা আমাকে ভয় পাও কেন? তোমরা সকলে একমত হয়ে আমাকে তোমাদের রাজা করো। তাহলে আমিই তোমাদের দেখাশোনা করব। তোমরা তখন আমার প্রজা হবে। তোমাদের ওপরে কেউ যাতে কোনো অত্যাচার না করে তাই দেখাই হবে আমার কাজ।

বোকা পায়রাগুলি চালাক চিলের মিষ্টি কথায় ভুলে সবাই মিলে চিলকেই তাদের রাজা করল। আর চিল রাজা হবার পর থেকেই প্রতিদিনই একটি করে পায়রা মেরে খেতে লাগল। পায়রারা তখন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল, আমরা মূর্খের মতো যেমন আমাদের শত্রুর মিষ্টি কথায় ভুলেছিলাম, এখন তারই ফল আমাদের ভুগতে হচ্ছে।

নীতি: শত্রুর মিষ্টি কথায় কখনও বিশ্বাস করতে নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top